স্বামী পরিত্যক্ত মেয়েকে নিয়ে একই ঘরে থাকেন মা। সাথে দুই বছর বয়সী নাতি। অভাবের সংসারে মা-মেয়ে দুজনই জীবন চালান ভিক্ষা করে। দিন বিশেক আগে সেই মেয়ের ঘরে এলো ফুটফুটে আরেক সন্তান। অভাবের ভেতরেও আদর সোহাগের কমতি ছিলো না মেয়ের জন্য। কিন্তু, সে আনন্দ বেশিদিন স্থায়ী হলো না মায়ের। ২৭ আগস্ট নানীর কাছে নাতনিকে রেখে দোকানে যান মা। কিছুক্ষণ পর ফিরে দেখেন মাও নেই, মেয়েও নেই। অনেক খোঁজাখুজির পরও সন্ধান মিললো না কারো।
তিনদিন পর মা ঘরে ফিরলে মেয়ের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে মেয়ের কাছে স্বীকার করে নাতনিকে বিক্রি করে দিয়েছে ৮ হাজার টাকায়! এ ঘটনায় মেয়ে জেসমিন আক্তার বাদী হয়ে মা নুরুন্নাহারের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে কক্সবাজারের চকরিয়ায়। ২০ দিন বয়সী নাতনিকে বিক্রির অভিযোগে নানিকে এবং সহায়তার অভিযোগে নানির বোনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। তবে শিশু বিক্রির মূলেহাতা নানির বোনের ছেলে এখনও অধরা। বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর শিশুটিকে উদ্ধারে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ।
চকরিয়া থানার ওসি তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট ২নম্বর ওয়ার্ড ডুমখালী এলাকায় শিশু বিক্রির অভিযোগে নানিকে হেফাজেত আনা হয়েছে। বিক্রিতে সহায়তাকারী নানির বোনকে আটক এবং শিশুটিকে চট্টগ্রাম থেকে চকরিয়া নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে।
আটক নানি নুরুন্নাহার জানান, ’আমার বোনের ছেলে নবজাতককে আদর করার কথা বলে নাতনিকে নিয়ে উধাও হয়ে যায়। পরে জানতে পারি চট্টগ্রামের কর্ণফুলি ব্রিজ এলাকায় ৮ হাজার টাকায় নাতনিকে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে।’
নবজাতকের মা জেসমিন আক্তার বলেন, ‘স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করায় আমাকে ভরণপোষণ দেয় না। আমি ভিক্ষা করে খাই। আমার দুই বছর তিন মাস বয়সী আরো একটি সন্তান রয়েছে। ২০ দিন আগে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আমার একটি কন্যা সন্তান হয়। আমার মা, খালা, খালাতো ভাই টাকার বিনিময়ে আমার শিশুকে বিক্রি করে দিয়েছে। আমি পুলিশের সহায়তায় আমার শিশুকে ফেরত পেতে চাই।’
চকরিয়া থানার ওসি তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, ‘একজন শিশু নানির কাছেও নিরাপদ নয়। এই ঘটনা তারই প্রমাণ। নবজাতকের মা বাদী হয়ে নানিকে বিবাদী করে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও নবজাতককে উদ্ধার করতে কাজ করছে পুলিশ।’
পতাকানিউজ/জেডসি/কেএস

