আদালতে জামিন শুনানিতে কাঁদলেন ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমান। কিন্তু আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করেছেন। মঙ্গলবার ১২ আগস্ট ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেনের আদালতে জামিন শুনানির সময় কেঁদেছেন মতিউর। তবে বিচারক মতিউরকে ধৈর্যধারণ করতে বলে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, এদিন অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আসামি মতিউর রহমানকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। তার পক্ষে অ্যাডভোকেট মো. ওয়াহিদুজ্জামান জামিনের আবেদন করেন। আইনজীবীর বক্তব্যের পর মতিউর রহমান নিজে কিছু বলার অনুমতি চান। আদালত অনুমতি দেন।
তখন মতিউর বলেন, ‘আমি কারাগার থেকে দুদককে একটি চিঠি দিয়েছিলাম। আমি আপনাকে এ চিঠিটা দিলাম। আপনি দয়া করে চিঠিটা পড়ে যে আদেশ দেবেন, আমি তা মাথা পেতে নেব।’
মতিউর আবার বলেন, ‘আমার পরিবারটা ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি কারাগারে। আমার স্ত্রীও কারাগারে। আমার মা প্যারালাইজ্ড হয়ে ঘরে পড়ে আছেন। তাকে দেখার কেউ নেই।’ এ কথা বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
পরে আবার বলেন, ‘আমাকে জামিন দেন। আমি নির্দোষ সেটা আদালতে প্রমাণ করতে পারবো।’ আদালত বলেন, ‘আপনি দোষী বা নির্দোষ সেটা এখনই বলা যাবে না। মামলাটি তদন্তাধীন। তাই আপনাকে আরও ধৈর্য ধারণ করতে হবে।’ এরপর আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২ জুলাই মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদ বিবরণী চেয়ে পৃথক নোটিশ পাঠায় দুদক। এসব নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২৯ আগস্ট মতিউর, তার দুই স্ত্রী এবং ছেলে-মেয়েসহ পাঁচজনের সম্পদ বিবরণী দুদকে জমা দেন। চলতি বছর ৬ জানুয়ারি মামলা করে দুদক। আর ১৪ জানুয়ারি তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
প্রসঙ্গত, কোরবানির জন্য ১৫ লাখ টাকা দিয়ে একটি ছাগল কিনতে গিয়ে আলোচনায় আসেন মুশফিকুর রহমান ইফাত নামের এক যুবক। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। বলা হয়, তার বাবা এনবিআর সদস্য এবং কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমান। এরপর আলোচনায় চলে আসে— মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের কোথায় কী পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। এসব আলোচনার মধ্যে একের পর এক বেরিয়ে আসতে থাকে মতিউর পরিবারের বিপুল বিত্তবৈভবের চাঞ্চল্যকর তথ্য।
গত বছরের ৪ জুন তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে কার্যক্রম শুরু করে দুদক। মতিউর আর তার পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের সন্ধান পাওয়া যায়। পরে মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব, মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবার হিসাব ও শেয়ারবাজারের বিও হিসাব ক্রোক করা হয়। মতিউর ও তার প্রথম স্ত্রী এবং সন্তানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।
পতাকানিউজ/এমওয়াই

