জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন (ইসি) চূড়ান্ত খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করেছে নতুন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। এর মধ্যে সবচেয়ে ধরার মতো হলো—বিদেশে কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থী জনসভা, পথসভা বা অন্য কোনো প্রচারণা আয়োজন করতে পারবে না। এছাড়া নির্বাচনী প্রচারে পোস্টার বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উপকরণ ব্যবহারও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান, সংশোধিত আচরণ বিধিমালার চূড়ান্ত খসড়া ভেটিংয়ের জন্য গত মঙ্গলবার আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। একই দিনে সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) চূড়ান্ত খসড়াও আইন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেছে। নতুন খসড়ায় পলাতক বা ফেরারি আসামিরা সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হারাবেন।
চূড়ান্ত খসড়ায় নির্বাচনী প্রচারে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়েও নতুন বিধান রাখা হয়েছে। ড্রোন, কোয়াডকপ্টার বা অন্য কোনো এজাতীয় যন্ত্র নির্বাচনকালীন প্রচারে ব্যবহার করা যাবে না। নারীদের সাইবার বুলিং রোধে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে মিথ্যাচার বা অপপ্রচার চালালে প্রার্থী শাস্তি ও প্রার্থিতা হারাবেন।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য প্রার্থীকে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। দলের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ জরিমানা নির্ধারিত হয়েছে দেড় লাখ টাকা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও এআই ব্যবহারকে নির্বাচনী প্রচারে সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে।
চূড়ান্ত খসড়ায় সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের তালিকায় অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কোনো প্রার্থী কোনো প্রতিষ্ঠান, সমিতি বা সংগঠন থেকে সংবর্ধনা গ্রহণ করতে পারবেন না। নির্বাচনী প্রচারে হেলিকপ্টার বা অন্য কোনো আকাশযান ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও দলীয় প্রধান বা সমপর্যায়ের পদধারীরা যাতায়াতের জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারবেন। তবে হেলিকপ্টার থেকে লিফলেট, ব্যানার বা অন্য কোনো প্রচার সামগ্রী বিতরণ বা প্রদর্শন করা যাবে না।
বিলবোর্ডের ব্যবহারও সীমিত করা হয়েছে। প্রার্থী কোনো নির্বাচনী এলাকায় সর্বাধিক ২০টি বিলবোর্ড ব্যবহার করতে পারবেন এবং প্রতিটির আয়তন ১৬ ফুট বাই ৯ ফুটের বেশি হতে পারবে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার করা যাবে, তবে মানহানিকর বিষয় প্রচার করলে ডিজিটাল বা সাইবার সুরক্ষা আইনের আওতায় শাস্তি হবে।
চূড়ান্ত খসড়ায় আরও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে—প্রত্যেক রাজনৈতিক দল ও প্রার্থী আচরণবিধির সব বিধান মেনে চলার অঙ্গীকারনামা ইসিতে জমা দেবেন। এর মাধ্যমে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, নৈতিকতা ও সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্য রাখা হয়েছে।
পতাকানিউজ/এনটি

