বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা) দরদি ও মায়ার নবী হিবেসে তুলনাহীন। উম্মতের প্রতি প্রিয় নবীর ভালোবাসা পরিমাপ করে শেষ করা যাবে না। রাসুল (সা.) উম্মতের কল্যাণকামী ছিলেন। তাকে উম্মতের জন্য রহমত ও কল্যাণ হিসেবে প্রেরণ করেছেন আল্লাহ তায়ালা। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, আর আমি তো আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি। (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭)
উম্মতের জন্য তিনি এতটাই আবেগপ্রবণ ছিলেন যে, মহান আল্লাহর দরবারে তাদের মুক্তির জন্য কান্নাকাটি করতেন। এ প্রসঙ্গে সহিহ মুসলিমে আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) বর্ণিত হাদিসে কুদসিতে এসেছে,
তিনি বলেন, রাসূল (সা.) একদিন সমবেত সাহাবিদের সামনে মহান আল্লাহর একটি বাণী পাঠ করলেন, যাতে নিজ উম্মত সম্পর্কে হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর এই বক্তব্য উল্লেখ আছে, হে আমার পরওয়ারদিগার! এই মূর্তিগুলো অসংখ্য মানুষকে বিপথগামী করেছে। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার অনুসরণ করবে কেবল সেই আমার দলভুক্ত। আর কেউ আমার কথা অমান্য করলে তুমি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা ইবরাহিম ৩৬)
আরেক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমাকে অভিশাপকারী করে পাঠানো হয়নি, আমাকে রহমত হিসেবে পাঠানো হয়েছে। (মুসলিম, হাদিস : ২৫৯৯)
রাসুল (সা.) আল্লাহর কাছে উম্মতের জন্য নিরাপত্তা, রহমত ও কল্যাণ কামনা করেছেন সব সময়। উম্মতের নিরাপত্তার জন্য তিনি আল্লাহর কাছে তিনটি দোয়া করেছিলেন, এরমধ্যে দুইটি কবুল হয়েছে, অপরটি হয়নি। হাদিসে রাসুল (সা.) এর এই দোয়া সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে,
হযরত সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, আমি রাসুল (সা.) এর সফরসঙ্গী ছিলাম। বনী মুয়াবিয়ার মসজিদের পাশ দিয়ে গমন করছিলাম আমরা। রাসুল (সা.) থামলেন। মসজিদে প্রবেশ করে দু’রাকাত নামাজ আদায় করলেন। আমিও দু’রাকাত নামাজ আদায় করলাম। নামাজের পর রাসুল (সা.) দীর্ঘক্ষণ ধরে দোয়া করলেন। তারপর বললেন,
আমি আমার প্রভু প্রতিপালকের কাছে তিনটি বিষয়ে প্রার্থনা জানালাম। প্রথমটি হচ্ছে, আমার উম্মতকে যেন হযরত নূহের উম্মতের মতো পানিতে ডুবিয়ে মারা না হয়। আল্লাহ তায়ালা আমার এই দোয়া কবুল করেছেন। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, আমার উম্মত যেনো দুর্ভিক্ষগ্রস্ত না হয়। আল্লাহ তায়ালা আমার এই দোয়াটিও কবুল করেছেন। তৃতীয়টি হচ্ছে আমার উম্মতেরা যেন নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত না হয়, আল্লাহ আমার এই দোয়াটি কবুল করেননি। (বাগবী)
উম্মতের প্রতি প্রিয় নবী (সা.) এর ভালোবাসা পরিমাপ করে শেষ করা যাবে না। যে কারণে মহান আল্লাহ আয়াত নাজিল করেছেন এভাবে, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে একজন রাসুল এসেছেন, (তোমাদের জন্য তার মায়া এতই বেশি যে) তোমাদের যা কিছু কষ্ট দেয় তা তার কাছে খুবই কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা তওবা ১২৮)
পতাকানিউজ/এএইচ

