যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলারের জরিমানা দাবি করেছেন। অভিযোগ, ২০২৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লস অ্যাঞ্জেলেস ক্যাম্পাসে (ইউসিএলএ) ফিলিস্তিনের পক্ষে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলাকালে ইহুদিবিদ্বেষী হামলার ঘটনা ঘটে। এ কারণেই জরিমানা আরোপ করা হয়েছে বলে ট্রাম্প প্রশাসন জানায়।
এর আগে একই অভিযোগে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কেও জরিমানা করা হয়েছে। তবে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিমানার পরিমাণ পাঁচ গুণ বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেছেন, এত বড় অর্থদণ্ড দিলে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় ‘ধস’ নেমে আসবে।
নিয়মিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সেরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরেই ট্রাম্প প্রশাসনের টানাপোড়েন চলছে। যার জেরে ইউসিএলএর ৫০ কোটি ডলারের চিকিৎসা ও বিজ্ঞানবিষয়ক গবেষণা অনুদান আটকে রাখা হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থার আওতায় ইউসিএলএ-সহ ১০টি ক্যাম্পাস রয়েছে, যার তত্ত্বাবধায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট জেমস মিলিকেন। তিনি জানান, তারা শুক্রবার জরিমানার বিষয়টি জানতে পেরেছেন এবং তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
মিলিকেন বলেন, “সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমরা করদাতাদের অর্থের রক্ষক। এত বিপুল পরিমাণ জরিমানা দিতে হলে দেশসেরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হবে, যা শিক্ষার্থীসহ সব ক্যালিফোর্নিয়াবাসীর জন্য ক্ষতিকর।” তাঁর দাবি, ইউসিএলএ ও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা উদ্ভাবন দেশের অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সুসংহত করে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকেই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিশানা করে আসছেন। যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ক্ষোভ ও সমালোচনার ঝড় বইয়ে যাচ্ছে।
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর ও বিশ্ববিদ্যালয় বোর্ডের সদস্য গ্যাভিন নিউসম বলেন, “আমরা মামলা করব।” তাঁর অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একাডেমিক স্বাধীনতা দমনের চেষ্টা করছেন। নিউসম আরও জানান, ক্যালিফোর্নিয়া যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির মূলভিত্তি। এখানেই সবচেয়ে বেশি বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও নোবেলজয়ী আছেন, যার কৃতিত্ব ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েরই।

বিভিন্ন গণমাধ্যম জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন জরিমানার অর্থ কিস্তিতে আদায়ের পরিকল্পনা করছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়কে ১৭ কোটি ২০ লাখ ডলার আলাদা একটি তহবিলে জমা দিতে বলা হয়েছে, যা ইহুদি শিক্ষার্থী ও বৈষম্যের অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণে ব্যবহার হবে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়। সেসময় কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইউসিএলএ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে তাঁবু স্থাপন করে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেয়। পুলিশ তখন কঠোর অভিযানও চালায়। যার প্রেক্ষিতে তৎকালিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আহ্বান জানিয়েছেন।
সূত্র: এএফপি
পতাকানিউজ/ওয়াইএস

