গাজা উপত্যকাজুড়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর স্থল ও বিমান হামলায় বুধবার ভোর থেকে আরও বহু ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার সবচেয়ে বড় শহর গাজা সিটিতে পূর্ণমাত্রার স্থল অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল, আন্তর্জাতিক সমালোচনা উপেক্ষা করেই। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন এক শিশু ও তার মা; পশ্চিম গাজা সিটির শাতি শরণার্থী শিবিরে একটি আবাসিক ভবনে বিমান হামলায় তারা প্রাণ হারান।
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গাজা সিটিতে বোমাবর্ষণ ভয়াবহভাবে বেড়েছে। টানা বিস্ফোরণে ডজন ডজন বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। ট্যাঙ্ক ও যুদ্ধবিমান ছাড়াও এবার নৌযান থেকেও গোলাবর্ষণ চলছে।
ইসরায়েল এই যুদ্ধে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৬৫ হাজার ৬২ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং এক লাখ ৬৫ হাজার ৬৯৭ জন আহত হয়েছে বলে স্বীকার করেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও বহু মানুষ চাপা পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে এক হাজার ১৩৯ জন নিহত হয়েছিলেন এবং প্রায় ২০০ জনকে বন্দি করা হয়েছিল।
ইইউ’র উদ্বেগ
গাজায় ইসরায়েলের বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অবিরাম হামলা নিয়ে উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এসব হামলায় এখন পর্যন্ত ২ লাখ ২৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত ও আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। গত দুই সপ্তাহেই ৪ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সাবেক ৩২৫ জন রাষ্ট্রদূত ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।

আমরা জোরালোভাবে আহ্বান জানাচ্ছি—ইউরোপীয় ইউনিয়ন যেন অবিলম্বে ইসরায়েলি সরকারের ওপর লক্ষ্যভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং ইইউ-ইসরায়েল অ্যাসোসিয়েশন চুক্তি স্থগিত করে। পাশাপাশি আমরা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিকে অনুরোধ করছি, তাঁরা যেন উভয় সংস্থার জরুরি বৈঠক আহ্বান করেন এবং ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে প্রতিদিন সংঘটিত বহুবিধ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের কারণে ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা গ্রহণ করেন।
শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য প্রতিষ্ঠিত বৈশ্বিক সংস্থা হিসেবে জাতিসংঘকে অবশ্যই তার দায়িত্ব পালন করতে হবে।
ইসরায়েলের লক্ষ্য ‘গাজা সিটিকে প্রাণহীন করা’
ইসরায়েলের রাজনৈতিক গবেষক মেনাচেম ক্লেইন বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড থেকে স্পষ্ট যে তাদের প্রধান লক্ষ্য হামাসের বন্দিদের উদ্ধার নয়, বরং ওই ভূখণ্ডটিকে ‘প্রাণহীন’ করে তোলা।
বার-ইলান বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র লেকচারার ক্লেইন আল জাজিরাকে বলেন, বন্দিদের ফেরানো ‘ইসরায়েলি অভিযানের একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, কিন্তু প্রধান লক্ষ্য নয়’।
তিনি আরও বলেন, ‘গোলযোগ নয়, কিন্তু পরিকল্পিতভাবে প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকার ধ্বংস করছে ইসরায়েল। যুদ্ধের পরও তারা পদ্ধতিগতভাবে অবকাঠামো ধ্বংস করে।’
ক্লেইনের মতে, গাজা ধ্বংস করে ফেলার পর ইসরায়েলের লক্ষ্য হবে জনসংখ্যাকে এক ‘কনসেন্ট্রেশন জোন’-এ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং পরে তাদের গাজা থেকে বের করে দিয়ে সেখানে বাইরের প্রচলিত জীবনযাত্রার সুযোগ দেখিয়ে ধাক্কা দিয়ে পাঠানো।
কোনো শক্তি আমাদের বাধা দিতে পারবে না : এরদোয়ান

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি তুরস্কের একাত্মতা পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং অধিকৃত পূর্ব জেরুসালেম সম্পর্কে মুসলিমদের অধিকার হস্তক্ষেপ হতে দেবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অঙ্কারা রাজধানীর নতুন তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর নির্মাণ অনুষ্ঠানে এরদোগান বলেন, ‘আমরা জেরুজালেমকে কলুষিত হাতে দিলাম না—দেওয়া হবে না।’
তুরস্কের এই নেতাও গাজার প্রতি সমর্থন জোর দিয়ে বলেছেন, ‘ইসরায়েলি নৃশংস হামলার নিচে বেঁচে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে গাজার নির্যাতিত জনগণের পাশে দাঁড়ানো থেকে আমাদের কোনোই শক্তি বিরত রাখতে পারবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা আমাদের অঞ্চলে রক্তভেজা সমুদ্র গড়তে চায় এবং যারা আমাদের ভূখণ্ডে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আজ ও আগামীকালে অটল থাকব।’
আম্মানে জর্ডান-কাতার বৈঠক: আঞ্চলিক ইস্যু ও গাজা যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা

জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ দ্বিতীয় এবং কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি আম্মানে বৈঠক করেছেন। বৈঠক শেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ দেওয়া এক পোস্টে বাদশাহ আবদুল্লাহ লিখেছেন, ‘আমাদের সম্পর্ক ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ এবং দুই দেশের জনগণের কল্যাণে পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করার প্রতিশ্রুতিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ। আরব ও ইসলামী স্বার্থ রক্ষায় আমরা একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব।’
বৈঠকটি জর্ডানের আম্মানের বাসমান প্রাসাদে অনুষ্ঠিত হয়। কাতার নিউজ এজেন্সির খবরে জানানো হয়েছে, বৈঠকে দুই নেতা আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যুর পাশাপাশি গাজার চলমান পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেন।
পতাকানিউজ/কেএস

