গায়েবি মামলা থেকে বাঁচার জন্য ফৌজদারী কার্যবিধি সংশোধন করা হয়েছে। তাই কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনে অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত কারণ উল্লেখ করতে হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. হাসানুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম সিএমএম আদালতে অনুষ্ঠিত পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্সে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, ‘মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তরিকতা ও সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে একযোগে ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে নিজ নিজ দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতে হবে। অর্থঋণ আদালতের টাকা জনগণের টাকা। তাই অর্থঋণ আদালতের ওয়ারেন্ট দ্রুততম সময়ের মধ্যে তামিল করার জন্য তিনি গুরুত্বারোপ করেন।’
এর আগে কনফারেন্সের শুরুতে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান বিগত সভার সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতি তুলে ধরেন। তিনি বিচারাধীন সকল মামলার বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের দিক নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, ‘মেডিকেল সনদ যাতে দ্রুত পাওয়া যায়, সে বিষয়ে মনিটরিং করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হবে। ৬০ কর্ম দিবসের মধ্যেই তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। আলামত জব্দের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে জব্দ তালিকা পূরণ করতে হবে। ফৌজদারী কার্যবিধির নতুন সংশোধনী অনুযায়ী আসামি গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে মেমোরেন্ডাম অব এরেস্ট যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে। কোনো অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হলে ১২ ঘণ্টার মধ্যে তার পরিবার বা তার আত্মীয়-স্বজনকে জানাতে হবে বলেও জানান তিনি।
উপ-পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) জিয়াউদ্দিন বলেন, ‘পুলিশ এখন আগের চেয়ে জনবান্ধব। প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সঠিকভাবে দায়িত্বপালনের চেষ্টা করছে। যা অব্যাহত থাকবে। কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার দেখানোর ক্ষেত্রে এখন থেকে আর কোন খামখেয়ালি করা যাবে না।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের প্রতিনিধি ডা. মো. সেলিম উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ‘ওসিসি একটি স্বতন্ত্র প্রজেক্ট। তার কার্যক্রমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ নেই। এজন্য বেশ কিছু মামলায় ডিএনএ রিপোর্ট প্রাপ্তিতে বিলম্ব হচ্ছে।’
অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ার বলেন, ‘ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৪ ধারা সংশোধনীর মাধ্যমে মূলত ব্লাস্ট বনাম রাষ্ট্র মামলার বিধানাবলী বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ সংশোধনীর ফলে ওয়ারেন্ট ব্যতীত কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে তাকে অবশ্যই গ্রেপ্তারের কারণ জানাতে হবে।’
মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনের ক্ষেত্রে এখন থেকে আইনজীবীদের শুনানির সুযোগ দিতে হবে। আসামি গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনে অবশ্যই পর্যাপ্ত কারণ থাকতে হবে।’
চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইব্রাহিম খলিল, মো. আলমগীর হোসেন, মোহাম্মদ মোস্তফা, এস.এম.আলাউদ্দিন মাহমুদ ও নুসরাত জাহান জিনিয়া।
কনফারেন্সে পুলিশ কমিশনারের প্রতিনিধি উপ-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) মো. রইস উদ্দিন, বিশেষ পুলিশ সুপার (সিআইডি) ছত্রধর ত্রিপুরা, ট্যুরিস্ট পুলিশের বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস ছাত্তার, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ হাসান আলী চৌধুরী, মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর মো. মফিজুল হক ভূইয়াসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক, সিনিয়র জেল সুপারের প্রতিনিধি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক, চট্টগ্রাম নগরের ১৬ থানার অফিসার ইনচার্জ, প্রবেশন কর্মকর্তা এবং অন্যান্য অংশীজন উপস্থিত ছিলেন।
পতাকানিউজ/আরএস/এসজিএন

