চট্টগ্রাম চেম্বারের আসন্ন পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন নিয়ে নতুন করে অতীতের ফ্যাসিবাদী পরিবারতন্ত্র পুনর্বহালের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেছে চট্টগ্রামের সচেতন ব্যবসায়ী সমাজ ও ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট এন্ড বিজনেসম্যান ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশন।
বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক মিলনায়তনে এ আয়োজন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চট্টগ্রাম সচেতন ব্যবসায়ী সমাজের আহ্বায়ক এসএম নুরুল হক।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দেশের অন্যতম প্রাচীন বাণিজ্য সংগঠন দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন আগামী ১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। চেম্বারে অতীতের ভুয়া ভোট, নামসর্বস্ব, বির্তকিত ও বৈষম্যমূলক টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ বাতিলসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে চেম্বারে ব্যবসায়ীদের সত্যিকার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকল্পে আমরা অনেকদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করছি।

অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্তের মাধ্যমে অকার্যকর বিধায় বাতিলকৃত টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ সদস্যদের পুনর্বহাল করে অতীতে চেম্বারকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সংগঠন হিসেবে ব্যবহারকারীদের সঙ্গে যোগসাশজে একটি চক্র আবারও এ প্রতিষ্ঠানকে বিগত দিনের ন্যায় দখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
এসএম নুরুল হক বলেন, পটিয়া অ্যাসোসিয়েশন থেকে ভোটার হয়েছেন চট্টগ্রাম-১১ আসনের (বন্দর-পতেঙ্গা) আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি এমএ লতিফের ছেলে ওমর মুক্তাদির। পটিয়ার ধৌরাডেঙ্গায় জি ডি মৎস্য খামার নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রোপাইটার হিসেবে পটিয়া অ্যাসোসিয়েশনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন তিনি। অথচ তার বাড়ি নগরীর খুলশী এলাকায়। নগরীতে বসবাস করে কিভাবে তিনি পটিয়া অ্যাসোসিয়েশন থেকে ভোটার হয়েছেন?
রাঙ্গুনিয়া অ্যাসোসিয়েশন থেকে ভোটার হয়েছেন আবছার হাসান চৌধুরী জসিম। তিন এমপি লতিফের মামাতো ভাই জহুর আলমের ভাইরা ভাই।
হাটহাজারী অ্যাসোসিয়েশন থেকে ভোটার হয়েছেন দুজন। এরা হলেন-আনিস উদ্দিন ও মোহাম্মদ মনির উদ্দিন। এদের মধ্যে মনির উদ্দিন হলেন লতিফের মেজো সম্বন্ধীর (স্ত্রীর বড় ভাই) মেয়ের জামাই।
বোয়ালখালী অ্যাসোসিয়েশন থেকে ভোটার হয়েছেন সাজ্জাদ উন নেওয়াজ। তিনি চিটাগাং চেম্বারের গত নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান নুরুন নেওয়াজ সেলিমের ছেলে। তার গ্রামের বাড়ি ফেনীতে। কিন্তু তিনি কিভাবে বোয়ালখালী অ্যাসোসিয়েশনের ভোটার হয়েছেন?
চিটাগাং মিল্ক ফুড থেকে ভোটার হয়েছেন চারজন। এর মধ্যে রয়েছেন-পিএইচপি মোটর্সের প্রোপাইটার আকতার পারভেজ হিরু। তিনি পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের ছেলে। চিটাগাং ডাইস অ্যান্ড কেমিক্যালস থেকে ভোটার হয়েছেন পাঁচজন। এদের মধ্যে -স্মার্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমানও রয়েছেন, আছেন সীকম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আমীরুল হক। মোস্তাফিজুর রহমান আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি এম এ লতিফের বেয়াই। লতিফের দ্বিতীয় ছেলে ওমর খৈয়াম মোস্তাফিজুর রহমানের মেয়েকে বিয়ে করেছেন। চিটাগাং ডাইস অ্যান্ড কেমিক্যালস গ্রুপ নামের এ প্রতিষ্ঠানের সেক্রেটারি হলেন মোস্তাফিজুর রহমানের মেয়ের জামাতা ওমর খৈয়াম।
চিটাগাং টায়ার টিউব থেকে ভোটার হয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম সাইফুল আলম। এ ৭ সদস্যদের ডেলিগেট মেম্বারের মধ্যে তিনিই একমাত্র বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ী ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। চিটাগাং চেম্বারের একজন সাবেক সভাপতি ভোটার তালিকায় বাদ পড়ার পরও বানোয়াট কাগজপত্র দিয়ে আপিল করে ১১ সেপ্টেম্বর বিকেলে স-শরীরে উপস্থিত হয়ে আপিল বোর্ডকে অনেকটা বাধ্য করেছেন। যাতে এসব সদস্যকে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এ তালিকা থেকে এটা স্পষ্ট যে, এমপি লতিফের সন্তান এবং পরিবারের সদস্য ও আত্মীয় স্বজনদের আবারও চেম্বারের পরিচালক নির্বাচিত করে চেম্বারকে পুরোনো দিনের মত দখল করে রাখতে চান চেম্বারের এ প্রাক্তন সভাপতি।

তিনি বলেন, আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে তিনি নিজে চেম্বারের সভাপতি থাকাকালে পরবর্তী বোর্ডের পরিচালক নির্বাচনে ট্রেড গ্রুপ থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন এবং এসব ট্রেড গ্রুপ ও টাউন অ্যাসোসিয়েশনের ওপর লতিফের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের কারণে তিনি নিজে পরাজিত হয়েছিলেন। গত ৫ জানুয়ারি তিনি একটি জাতীয় পত্রিকায় বলেছিলন, ‘চেম্বারে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন। তার আগে এ ধরনের শ্রেণিগুলো বাদ দেয়া দরকার। কারণ এসবের আড়ালে চেম্বারে ছয় পরিচালক পদে আগে থেকে নিজেদের মানুষ বসিয়ে দেয়ার সুযোগ থাকে।’
তিনি আরও বলেন, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় গত ২০ আগস্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এসব সংগঠন অকার্যকর হওয়ার কারণে সদস্য পদ বাতিল হওয়ার পরে তিনি নিজেই উদ্যোগী হয়ে এমএ লফিতের সন্তান ও আত্মীয়দের চেম্বারের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন যা অত্যন্ত অনৈতিক ও ব্যবসায়ীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
এসব অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে অভিযুক্তদের সদস্য পদ বাতিল করার জন্য চেম্বারের প্রশাসক, নির্বাচন বোর্ড এবং মহাপরিচালক বাণিজ্য সংগঠনের নিকট বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি। যদি এসব অকার্যকর টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ সদস্যদের এবং তাদের প্রতিনিধি স্বৈরাচারের দোসরদের চেম্বারের নির্বাচন থেকে বিরত রাখা না হয় তাহলে আমরা সাধারণ ব্যবসায়ীরা তীব্র আন্দোলন ও প্রতিবাদ গড়ে তুলব।
নির্বাচন ১ নভেম্বর
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচন। চেম্বারের সংঘবিধি ও সংঘস্মারক অনুযায়ী নির্বাচনের ৬০ দিন আগে সদস্যপদ নবায়নকৃতরা নির্বাচনে প্রার্থী ও ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। চট্টগ্রাম চেম্বারে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৩ সালে। এরপর সরাসরি আর কোনো ভোট হয়নি। আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি এমএ লতিফ তার পছন্দের ব্যবসায়ীদের নেতা বানিয়ে কমিটি গঠন করতেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বঞ্চিত ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের মুখে চেম্বার সভাপতি, দুই সহসভাপতি ও ২১ পরিচালক পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। পরে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। গত ১১ আগস্ট নির্বাচন বোর্ডের প্রধান ও চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক মনোয়ারা বেগম চেম্বার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী আগামী ৭ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচনী বোর্ড।
১৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশ হবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। ফরম বিক্রি হবে ১৪ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর। ২১ সেপ্টেম্বর জমাদানের শেষ তারিখ। ২৫ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক ও ৫ অক্টোবর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।
পতাকানিউজ/আরবি/কেএস

