চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া এলাকায় ভবন নির্মাণ চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলেন এক চিকিৎসক। ফেসবুক লাইভে এসে তিনি ‘বিএনপির সন্ত্রাসীরা’ চাঁদা না পেয়ে তার উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তবে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) জানিয়েছে, ঘটনাটি রাজনৈতিক নয়, বরং নকশা লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশীর সঙ্গে সংঘর্ষের জের।
ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট বিকেলে বাকলিয়া থানার কে বি আমান আলী রোডের পুরাতন চারতলা এলাকায়। ফেসবুক লাইভে এসে নির্যাতনের অভিযোগ করা চিকিৎসক ইকবাল হোসেন (৩৮) চট্টগ্রামের ইবনে সিনা হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার। ঘটনার পর আহত অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
লাইভে কী বলেছিলেন ইকবাল?
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ৩৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে ইকবাল হোসেনকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি ডাক্তার ইকবাল। বাকলিয়ায় পুরাতন চারতলায় আছি। আমাকে… বিএনপির হারুন; ওদের সন্ত্রাসীদেরকে টাকা দিই নাই বলে আমাকে মারছে, আমাকে মারার জন্য খুঁজতেছে। আমি লুকাই আছি একটা ঘরের মধ্যে। ৯৯৯-এ ফোন দিয়েছি। ২০-৩০ মিনিট হয়ে গেছে, ওরা আসতেছে না। আমাকে বাঁচান ভাই।’
এরপরই ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়েন তিনি। এরপর পাশের একটি ভবনে আশ্রয় নেন ডা. ইকবাল।
পুলিশের ব্যাখ্যা
বাকলিয়া থানার ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা বা চাঁদা দাবির প্রমাণ মেলেনি। ভবন নির্মাণকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশীর সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনায় চিকিৎসক আহত হন। পরে তিনি নিজের একটি ভবনে আশ্রয় নেন এবং সেখান থেকেই ফেসবুকে লাইভ করেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে নিজেই বেরিয়ে আসেন।’
তিনি আরও জানান, লাইভে উল্লেখ করা সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক অভিযোগের বিষয়ে চিকিৎসক ইকবাল থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি।
ভবন নির্মাণ নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ
জানা গেছে, বাকলিয়ার পুরাতন চারতলা এলাকার এয়ার মোহাম্মদ স্কুল লেইনে চিকিৎসক ইকবাল হোসেন একটি সাততলা ভবনের জন্য সিডিএ থেকে নকশা অনুমোদন নেন এবং ২০২২ সালে নির্মাণকাজ শুরু করেন। তবে পাশের ভবনের মালিক সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা হাজী ফরিদুল আলম ও তাঁর স্ত্রী স্কুলশিক্ষিকা আমেনা বেগম অভিযোগ করেন, ইকবাল অনুমোদিত নকশা লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণ করছেন।
এ নিয়ে স্থানীয়রা ‘বৃহত্তর রাহাত্তারপুল সমাজকল্যাণ পরিষদ’-এর ব্যানারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভও করেন। সিডিএ এ বিষয়ে একাধিকবার নোটিশ দেয়। সিডিএর প্রকৌশলী কাজী কাদের নেওয়াজ বলেন, ‘ইকবাল হোসেন অনুমোদিত নকশা লঙ্ঘন করে সাততলার জায়গায় আটতলা নির্মাণ করেছেন। ভবনের আশপাশের ফাঁকা জায়গা রাখা নিয়েও নিয়ম ভঙ্গের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তাকে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলাম।’
তিনি জানান, চলতি বছরের ২১ মে সিডিএর ইমারত কমিটি-১ থেকে ইকবালকে নোটিশ দিয়ে অননুমোদিত অংশ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়। তবে নির্দেশনা উপেক্ষা করে তিনি নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
কাজী কাদের আরও বলেন, ঘটনার দিন (১২ আগস্ট) আমরা সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলে উভয় পক্ষ ইকবাল হোসেন এবং প্রতিবেশী আমেনা বেগম একইভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। আমরা তাদেরকে অবৈধ অংশ চিহ্নিত করে তা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছি। আমরা ফিরে আসার পরই দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। চিকিৎসক ইকবাল পরে সিডিএ কর্মকর্তার সামনেই মারধরের শিকার হয়েছেন বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন এবং ৯৯৯ নম্বরেও ফোন করেন।
বিভ্রান্তি ছড়ানো অভিযোগ
সিডিএ সূত্র জানায়, ইকবাল হোসেন ভবনের কাজ বন্ধ রাখার বিষয়ে বারবার নির্দেশনা অমান্য করেছেন। এ ছাড়া তিনি এক চিঠিতে দাবি করেছিলেন, সিডিএ কর্মকর্তারা তাঁর কাছ থেকে চাঁদা দাবি করেছেন এবং নির্দিষ্ট কিছু দোকান থেকে ইট, সিমেন্ট কেনার জন্য চাপ দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে পুলিশি তদন্তে কোনো প্রমাণ মেলেনি এবং থানায়ও তিনি এ নিয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি।
পতাকানিউজ/কেএস

