রংপুরের তারাগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। গত তিন মাসে খুন, চুরি, ডাকাতি আর ছিনতাইয়ের ঘটনায় এলাকাজুড়ে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। নিরাপত্তাহীনতায় অনেকে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন গ্রামে গ্রামে।
এ সময়ের মধ্যে উপজেলায় অন্তত ৩টি খুন, ১৬টি চুরি-ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংকের পাশে জুয়েলারি দোকান ভেঙে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা চুরি, একাধিক গরু চুরি, সড়কে পথরোধ করে ছিনতাই, এমনকি শিশুহত্যার ঘটনাও।
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর সকালে তারাগঞ্জ থানার ১০০ গজ পূর্বে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার নিতাই চংড়া কাচারীপাড়া এলাকার রাকিব হোসেনর কাছে থেকে চোর চক্র অটো চুরি করে, ৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে তারাগঞ্জ বাজারের সোনালী ব্যাংক এলাকার রাধা জুয়েলার্সের প্রায় দুই লাখ টাকার স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা নিয়ে যায়, ১ সেপ্টেম্বর অনন্তপুর গ্রামের আবুল কাশেমের অটো বরাতি সেতু এলাকায় অজ্ঞান করে নিয়ে যায়, গত মাসের ২৩ আগস্ট রাতে কুর্শা ইউনিয়নের জিগারতলা গ্রামে দুলাল হোসেনের গোয়াল ঘর থেকে আড়াই লাখ টাকা মূল্যের চারটি গরু চুরি হয়, ২৪ আগস্ট রাতে বরাতী বাজার থেকে ফেরার পথে বিকাশ ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলামের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। ২ আগস্ট দীঘলটারী গ্রামের মফিজার রহমানের ৩টি ও পাটোয়ারী পাড়া গ্রামের হুমায়ন আহমেদের ২টি গরু চুরি হয়। এর মধ্যে ৯ আগস্ট চোর সন্দেহে সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট বটতলা এলাকায় গণপিটুনি দিয়ে ঘনিরামপুর গ্রামের রুপলাল দাস ও ভাগিন জামাই প্রদীপ দাসকে হত্যা করা হয়।
আরও জানা যায়, গত ২৯ জুলাই ঘনিরামপুর গ্রামের নিন্দালু মামুদের ২টি, মিঠু মামুদের ১টি গরু চুরি হয়, ২৮ জুলাই বকশিপাড়া গ্রামের সফিকুল ইসলামের পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া ছেলে ইরফান বাবুকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা ভ্যান নিয়ে যায়, ২৭ জুলাই পলাশবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা কুর্শা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ভারতী রানি ও তার দেবর প্রদীপ চন্দ্রর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতরা তাদেরকে বেঁধে দেড় লাখ টাকা ও দুই ভরি স্বর্ণ অলঙ্কার নিয়ে যায়, ২৫ জুলাই রাতে দোলাপাড়া গ্রামের গোলাম মোস্তফার পরিবারের সদস্যদের বেঁধে রেখে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও একটি মোটরসাইকেল নিয়ে যায় ডাকাতরা, ৬ জুলাই কুর্শা ঝাকুয়াপাড়া গ্রামের মেনারুলের ৭টি গরু চুরি হয়। ১ জুন তারাগঞ্জ ঘুরতে আসা ইরানি দম্পতি সেলিম রেজা ও ইসাসমিনকে দিন দুপুরে রামপুরা গ্রামে মারপিট করে তাদের কাছে থাকা ১০০ ডলারের ৫টা নোট, হাতঘড়ি ছিনতাই করা হয়। ২৯ মে ইকরচালী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতেরা মোবারকের পরিবারের সদস্যকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ২৫ লাখ টাকা ও ৩০ ভরি স্বর্ণ অলঙ্কার নিয়ে যায়।
তারাগঞ্জ বণিক সমবায় সমিতি সাবেক সভাপতি ও ঘনিরামপুর গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আগের মত পুলিশ আর আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। ফলে চুরি-ডাকাতি তারাগঞ্জে বেড়েই চলেছে।’
স্থানীয় বিএনপি নেতা মেহেদী হাসান বলেন, ‘ঘরে ঘরে গরু চুরি হচ্ছে। বুড়িরহাটে এক শিশুকে হত্যা করে ভ্যান চুরি করে নিয়ে গেছে। পুলিশ প্রশাসন কোনোভাবেই চুরি ডাকাতি ঠেকাতে পারছে না। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।’
এলাকাবাসীও একই অভিযোগ করেন। তাঁদের দাবি, পুলিশের টহল থাকলেও অপরাধীরা ভয় পাচ্ছে না। এতে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে।
তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল রানা জানান, চুরি ডাকাতি ঠেকাতে ৩ আগস্ট উপজেলা পরিষদ হলরুমে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে নিয়ে সভা করা হয়েছে। সয়ার ও কুর্শা ইউনিয়নে ২৭ জন আনসার ভিডিপি সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে এবং ইউনিয়নগুলোর বিভিন্ন মোড়ে ৪০টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
তারাগঞ্জ থানার ওসি এম এ ফারুক বলেন, ‘১৫টি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পুলিশের তিনটি টহল টিম কাজ করছে। প্রতিটি মসজিদে শুক্রবারে সচেতনতা তৈরির জন্য প্রচারণা চালানো হচ্ছে।’
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিতে উদ্যোগ নেওয়া হলেও এলাকায় এখনও বিরাজ করছে অস্থিরতা ও আতঙ্ক। সাধারণ মানুষ বলছেন, টেকসই পদক্ষেপ না নিলে দুর্বৃত্তদের দৌরাত্ম্য আরও বাড়বে।
পতাকানিউজ/এআই

