ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের জামানত ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার করার প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে তা অর্থনৈতিকভাবে কম শক্তিশালী প্রার্থীদের ভোটে আসতে নিরুৎসাহিত করবে বলে আশঙ্কা করেছেন বিশেষজ্ঞ এবং রাজনৈতিক নেতারা। তারা মনে করেন, এখন যে জামানত সেটাই তো বেশি। তাছাড়া ৫০ হাজার টাকা জামানতে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হবে না।
ইসি আরও ৪৫টি বিধান সংশোধনের প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে অন্যতম একই সঙ্গে একক প্রার্থী থাকলে সেখানে ‘না’ ভোটের বিধান চালু, ফেরারি আসামিকে ভোটের অযোগ্য ঘোষণা এবং অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ রাখা। এ সব প্রস্তাবের বিষয়ে রাজনৈতিক নেতা এবং বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
যদিও ইসির এ প্রস্তাব এখন আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদন এলে উপদেষ্টা পরিষদে তোলা হবে। চূড়ান্ত অনুমোদনের পর অধ্যাদেশ আকারে সংশোধন কার্যকর হবে।
বিশেষজ্ঞদের মত
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আব্দুল আলীম মনে করেন, জামানত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের জন্য নিরুৎসাহজনক হবে।
তিনি বলেন, অনেক প্রার্থী আছেন, যারা যোগ্য কিন্তু আর্থিকভাবে শক্তিশালী নন। এ ধরনের সিদ্ধান্ত তাদের অংশগ্রহণকে নিরুৎসাহিত করবে।
তবে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল রাখার পক্ষে তিনি। তার মতে, এতে শোডাউন কমবে, বাধা দেওয়া যাবে না এবং অসুস্থ বা ভ্রমণে থাকা প্রার্থীরাও সুবিধা পাবেন।
মত-দ্বিমত কমিউনিস্ট পার্টির
জামানত বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে শঙ্কা হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিপি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। এ সময় তিনি এমন প্রস্তাবের সমালোচনা করে বলেন, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বর্তমান জামানতই অনেক বেশি। যদি জামানত দিতে হয়, তাহলে যার যতো আয়, তার একটি শতাংশ নির্ধারণ করা উচিত।
‘না’ ভোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেবল একক প্রার্থীর আসনে নয়, সব আসনেই ‘না’ ভোটের সুযোগ থাকা দরকার।
ইসির প্রস্তাব অনুযায়ী ফেরারি আসামিরা ভোটে অযোগ্য হবেন। এ নিয়েও মতভেদ রয়েছে সিপিবির।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আদালতের রায়ে সাজাপ্রাপ্ত হলে প্রার্থিতা অযোগ্য হয়, সেটাই যথেষ্ট। ফেরারি আসামিকে সরাসরি অযোগ্য ঘোষণা করা হলে গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্ন হতে পারে।
অন্যদিকে, আব্দুল আলীম ফেরারি আসামিকে ভোটে সুযোগ না দেওয়ার পক্ষে। তার যুক্তি, কেউ যদি আদালতে হাজির না হন, তবে বোঝাই যায় তিনি অপরাধী। আদালতের ঘোষিত ফেরারি আসামি হলে তার ভোটের অধিকার থাকা উচিত নয়।
অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ রাখার বিষয়ে একমত বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক নেতারা। তাদের মতে, এতে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় শোডাউন, বিশৃঙ্খলা ও বাধা দেওয়ার ঘটনা কমবে।
সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, নানা বিবেচনায় অনলাইনে মনোনয়ন দাখিলের বিধান থাকা জরুরি। এতে অযথা শোডাউন এড়ানো যায়।
আব্দুল আলীম বলেন, অনলাইন আসলে দরকারি জিনিস। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় প্রায়ই বিশৃঙ্খলা হয়, বাধা দেওয়া হয়। অনলাইনে দাখিল করলে সে সুযোগ থাকবে না।
ব্যয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাবেও সমালোচনা
সংশোধনীর আওতায় নির্বাচনী ব্যয়সীমাও বাড়ানোর প্রস্তাব আছে। এতে ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রার্থীদের ওপর আর্থিক চাপ বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
পতাকানিউজ/এআই

