ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা আরও ২টি মামলায় আদালতে চার্জশিট দিতে যাচ্ছে পুলিশ। আন্দোলনে নিহত ওয়াকিল আহমেদ শিহাব ও সরোয়ার জাহান মাসুদ হত্যা মামলায় চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে এ চার্জশিট জমা দেয়ার কথা রয়েছে।
এ দুই হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৬২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে মামলায় কতজন আসামিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তা প্রকাশ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
গেল বছরের ৪ আগস্ট ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নির্বিচারে করা গুলিতে প্রাণ হারান ওয়াকিল আহমেদ শিহাব ও সরোয়ার জাহান মাসুদ। এ ঘটনায় ওই বছরের ২০ আগস্ট নিহত ওয়াকিল আহমেদ শিহাবের মা মাহফুজা আক্তার বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের কাশিমপুরে শিহাবের বাবার বাড়ি।
মামলায় ফেনী-১, ২ ও ৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্যসহ আসামি ১৫১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া আরও ১০০-১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। ওই ৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্যরা হলেন আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, নিজাম উদ্দিন হাজারী এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী।
একই বছরের ১৬ আগস্ট মহিপালে নিহত ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সরোয়ার জাহান মাসুদের মা বিবি কুলসুম বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। সেখানে সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীকে প্রধান করে ১৩৪ জনের নাম উল্লেখ ও আরও ১৫০-২০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
নিহত মাসুদ দাগনভূঞা উপজেলার উত্তর জায়লস্কর এলাকার মো. শাহজাহানের ছেলে।
এসব মামলায় উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- ফেনী সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল, ফেনী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান করিম উল্লাহ বিকম ওরফে রেঙ্গু করিম, যুবলীগ নেতা জিয়া উদ্দিন বাবলু প্রমুখ।
সরোয়ার জাহান মাসুদ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানার উপপরিদর্শক বেলাল উদ্দিন জানান, এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৪ জন এজাহারনামীয় ও ৮৬ জন সন্দেহভাজন। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে অনেক অস্ত্রধারী রয়েছে। মামলায় ফেনী পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আমির হোসেন বাহার ও অস্ত্রধারী নবী মেম্বারসহ ১৪ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ধর্মপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আবদুল্লাহ ও ছাত্রলীগ নেতা আবদুর রহিম হৃদয় নামে দুই আসামি দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
ওয়াকিল আহমেদ শিহাব হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানা পুলিশের উপপরিদর্শক মোতাহের হোসেন জানান, এ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত মোট ৬২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৩ জন ও সন্দেহভাজন ৪৯ জন রয়েছে।
মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা মেজবাহ উদ্দিন মেজু, এনামুল হক এনামসহ ৬জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নবী মেম্বার ও ফেনী পৌর ৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওসমান গণি লিটন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী জানান, চলতি মাসের মধ্যে ওয়াকিল আহমেদ শিহাব ও সরোয়ার জাহান মাসুদ হত্যা মামলার তদন্ত শেষ করে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়ার কাজ চলছে। দুই মামলায় কতজনকে অভিযুক্ত করা হবে তা এ মুহূর্তে বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে নিরপরাধ মানুষ যেন চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত না হয় সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট ফেনীর মহিপালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ফেনী মডেল থানায় ২৪টি মামলা করা হয়েছে। তার মধ্যে ৭টি হত্যা ও ১৭টি মামলায় হত্যাচেষ্টা ও সহিংসতার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এসব মামলার মধ্যে গত ৩১ জুলাই কলেজ শিক্ষার্থী মাহবুবুল হাসান মাসুম (২৫) হত্যা মামলায় আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে অন্যতম অভিযুক্ত করা হয়। তাছাড়া সে মামলায় আরও অভিযুক্ত রয়েছেন ফেনীর সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী ও মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীসহ ২২১ আসামি।
পতাকানিউজ/এএএম/এসজিএন

