যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরতম অঙ্গরাজ্য আলাস্কায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৈঠকে বসছেন আগামী শুক্রবার (১৫ আগস্ট)। ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানই এই শীর্ষ বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয়। তবে এসব ছাপিয়ে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কেন নিজেদের সুদূর উত্তরাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য আলাস্কাকে বেছে নিলেন, এ নিয়ে চলছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা। স্থান নির্বাচনে আলাস্কার ঐতিহাসিক পটভূমি, ভৌগোলিক গুরুত্ব ও রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা তুঙ্গে।
ফ্লোরিডা, ওয়াশিংটন কিংবা নিউ ইয়র্কের মতো পরিচিত ভেন্যু এড়িয়ে কেন ট্রাম্প আলাস্কাকে বেছে নিলেন, এ নিয়ে নানা বিশ্লেষণ চলছে। একসময় রাশিয়ার অংশ থাকা এ অঞ্চলটি ১৮৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র কিনে নেয়। বেরিং প্রণালির ওপারে মাত্র কয়েক মাইল দূরত্বে রাশিয়ার ভূখণ্ড—যা দুই দেশের ভূ-রাজনৈতিক ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। আপাতত আলাস্কাকে ভেন্যু নির্ধারণের যে কারণসমূহ আলোচনায় তা হল:
রাজনৈতিক হিসাব–নিকাশ
শুধু ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা নয়, আলাস্কা নির্বাচনের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক কৌশলও। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান বর্তমানে গাজা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিরোধে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আলোচনায়। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প চাননি এই বৈঠকে তাঁদের সম্পৃক্ততা আলোচনার ফোকাস বদলে দিক।
এছাড়া, ভৌগোলিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দূরবর্তী অঙ্গরাজ্যটি বেছে নেওয়া ট্রাম্পের জন্য ন্যাটো মিত্রদের থেকেও দূরে থাকার একটি কৌশল হতে পারে। ওয়াশিংটনের কিছু মিত্র আশঙ্কা করছে, ট্রাম্প হয়তো একতরফাভাবে ইউক্রেনের স্বার্থ উপেক্ষা করে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করতে পারেন।
নিরাপত্তা ও পুতিনের আইনি জটিলতা
আলাস্কার জনবিরল পরিবেশ নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর জন্য বাড়তি সুবিধা এনে দেয়। সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলা বা উসকানিমূলক ঘটনার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম। এর পাশাপাশি পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় তিনি আইসিসির সদস্য দেশগুলোতে গেলে গ্রেপ্তারের ঝুঁকিতে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্য নয়, তাই আলাস্কায় তাঁর উপস্থিতি নিয়ে আইনি বাধা নেই।
ভৌগোলিক ও কৌশলগত গুরুত্ব
আলাস্কা যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র আর্কটিক অঞ্চল, যা রাশিয়ার সঙ্গে সীমানা ভাগ করে। উত্তর সমুদ্রপথের উন্নয়ন, আর্কটিক মহাসাগরের তলদেশে তেল–গ্যাস অনুসন্ধান ও লোমোনোসভ রিজ নিয়ে উভয় দেশের কৌশলগত স্বার্থ জড়িয়ে আছে। এই পারস্পরিক স্বার্থ অনেক সময় সহযোগিতা বাড়ালেও, ভিন্ন পরিস্থিতিতে এটি পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা ও সামরিক মহড়ার মঞ্চে পরিণত হতে পারে।
ভূমি অদলবদল বিতর্ক
বৈঠকের সময় ও স্থান ঘোষণার পর ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউক্রেন ও রাশিয়ার মঙ্গলের জন্য কিছু এলাকা অদলবদল করা হবে।’ পুতিনও দাবি করে আসছেন, যুদ্ধে রাশিয়া ইউক্রেন থেকে দখল করা অঞ্চলগুলোর মালিকানা মস্কোর কাছে হস্তান্তর করতে হবে। পশ্চিমা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এমন একটি চুক্তি মস্কোর জন্য বড় কূটনৈতিক জয় হতে পারে।
তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই প্রস্তাবকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে কোন ভূখণ্ড হস্তান্তর করবেন না এবং দখলদারদের জন্য কোনো এলাকা উপহার দেওয়া হবে না। যদিও ১৫ আগস্টের বৈঠকে তাঁর উপস্থিতি এখনো নিশ্চিত হয়নি।
কূটনৈতিক মহলে ধারণা, আলাস্কার এই শীর্ষ বৈঠক থেকে যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া সম্পর্কের নতুন রূপরেখা বের হতে পারে। তবে বৈঠকটি আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও ইউক্রেন সংকটে সমাধান আনতে পারবে, নাকি বরং নতুন বিতর্ক উসকে দেবে সে প্রশ্ন রয়েই যায়। যার উত্তর জানতে বিশ্ববাসীকে অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েকদিন।
তথ্যসূত্র: আরটি
পতাকানিউজ/ওয়াইএস

