চট্টগ্রাম বন্দরের তিনটি বড় টার্মিনাল নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), বে-টার্মিনাল এবং লালদিয়া চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই আন্তর্জাতিক মানের অপারেটরের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। অপারেটরদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরসহ প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বিদায়ী সরকারের মেয়াদেই কাজ শুরু করতে চায় সংস্থাটি।
এদিকে রবিবার, ১০ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দরের চার নম্বর গেটে ডিজিটাল সিস্টেম ও এজেন্ট ডেস্কের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিডা চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, ‘দেশের প্রধান বাণিজ্যবন্দরকে আধুনিকীকরণ ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে নিতে পোর্ট পরিচালনায় অভিজ্ঞ অপারেটরদের যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই যাতে এসব প্রকল্পে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়, সেলক্ষ্যে কাজ চলছে।’
এনসিটি বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেডের মাধ্যমে। আগে এটি পরিচালনা করত দেশি প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক। ড্রাইডক দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই টার্মিনালে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ভলিউম এবং জাহাজের টার্ন অ্যারাউন্ড টাইমে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেছে।
বিডার তথ্য অনুযায়ী, কনটেইনার হ্যান্ডলিং এক মাসেই বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ এবং টার্ন অ্যারাউন্ড টাইম কমেছে ১৩ শতাংশ। বিডা বলছে, প্রতিবছর ১৩ লাখ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডল করা হলেও এনসিটির সক্ষমতা ১৯ লাখ টিইইউস পর্যন্ত। সঠিক অপারেটর ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। ড্রাইডকের চলমান পারফরম্যান্স ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্য একটি রেফারেন্স হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালে নিয়োজিত সৌদি প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজিটি) প্রত্যাশিত কার্যকারিতা দেখাতে পারেনি। বিডা জানিয়েছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক অপারেটরের সঙ্গে কাজ করার প্রস্তুতির ঘাটতি এবং নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এর কারণ। ফলে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক অপারেটরদের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে এসব শিক্ষা কাজে লাগানো হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করে দেশকে একটি গ্লোবাল ফ্যাক্টরি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য পুনর্ব্যক্ত করে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশের রপ্তানিকারক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যে দীর্ঘদিন সময় ব্যবধান নিয়ে অভিযোগ করে থাকেন সেটি দূর করতে হলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের তৈরি পণ্য যাতে কম সময়ে বিদেশে পৌঁছায়, সেলক্ষ্যে অবকাঠামো ও অপারেশন দুই ক্ষেত্রেই যুগান্তকারী পরিবর্তন প্রয়োজন।’

বন্দর ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল সেবা চালু করায় সেবার গতি ও স্বচ্ছতা বাড়বে বলে মনে করে বিডা। ডিজিটাল সিস্টেমে কাজ হলে সেবা সহজ হবে, হয়রানি কমবে, এবং বন্দর কার্যক্রমে পেশাদারিত্ব আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ডিসেম্বরের মধ্যেই এনসিটি, বে-টার্মিনাল ও লালদিয়ার জন্য আন্তর্জাতিক অপারেটরদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর এবং কাজ শুরু করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বিডা। সংস্থাটি বলছে, একবার এই উদ্যোগ কার্যকর হলে তা থেমে থাকবে না বরং দীর্ঘমেয়াদে দেশের বাণিজ্যিক সক্ষমতাকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে।
পতাকানিউজ/এএস/আরবি

