৭ বছর আগে নিখোঁজ হওয়া ভাইয়ের খোঁজে আদালতে মামলা করেছেন ওমান প্রবাসী মাহবুবুর রহমান। এতে চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালী আসনের সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের ছোট ভাই মো. তারেকুর রহমান প্রকাশ তারেকসহ (৪২) ৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ শুনানি শেষে মামলা তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) আদেশ দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, পাওনা টাকা চাওয়ায় নিখোঁজ তৌহিদুর রহমান সুমনকে (৩৯) গুম করা হয়েছে। মামলায় তারেক ছাড়া তার অপর সহযোগী এডভোকেট সলিমুল্লাহ চৌধুরীর মুহূরী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর মুন্সি ও বাকলিয়া ডিসি রোড মনু মিয়া বাপের বাড়ি আব্দুল মোনাফের ছেলে মো. জাহাঙ্গীর (৪৫)। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৪/৫ জনকে।
কী আছে মামলার এজাহারে?
মামলার এজহার থেকে জানা যায়, নিখোঁজ ভিকটিম তৌহিদুর রহমান সুমন ছাত্রদলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া ডিসি রোড এলাকার মনু মিয়া বাপের বাড়ি আব্দুল মোনাফের বিল্ডিংয়ের চিলেকোঠায় সায়েম, নাজিম ও জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন। ২০১৮ সালের ১১ জুন টাকা পাওনার বিষয় নিয়ে অভিযুক্তদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। এ বিষয় তিনি বড় বোন স্কুল শিক্ষিকা ফেরদৌসী রহমানকে জানান। এ ঘটনার জের ধরে সুমনের নানা হুমকি আসছে বলেও জানান। ওইদিনই তারেক ও জাহাঙ্গীর মুন্সি সুমনকে চাপ দিচ্ছে বলে বোন ফেরদৌসকে জানান রুমমেট সায়েম। ওইদিন বোন ফেরদৌস নিজে উস্থিত হয়ে তাদের বিষয়টি মিমাংসা করে দেন।
দু’দিন পর ১৩ জুন সকাল ৯টায় বোন ফেরদৌসীকে সুমনের রুমমেট সায়েম জানান, সুমন নাই। এ তথ্য পাওয়ার পরপর বোন ফেরদৌসী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দেখেন, সুমনের রুমের বেড, বিছানা এলামেলো। মোবাইল ফোন ও খাট ভাঙা পড়ে আছে। এসময় বাড়ির মালিকের ছেলে জাহাঙ্গীর ও রুমমেট সায়েম ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। আশপাশের লোকজন ফোরদৌসীকে ঘটনাস্থল থেকে চলে যেতে বলেন। অন্যথায় তার ক্ষতি হবে বলেও জানান।
মামলা না নিয়ে জিডি
পরে ১৫ জুন নগরীর চকবাজার থানায় তারেকের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে থানা মামলা না নিয়ে একটি জিডি নেন। তবে ভিকটিমকে উদ্ধার না করে বিভিন্নভাবে জানানো হয় তিনি যেন আইনি পদক্ষেপ না নেন। এ বিষয়ে তৎকালীন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ.জ.ম. নাসির উদ্দিনের কাছে ই-মেইলে সাহায্য চেয়েও কোন সাড়া পাননি।
সুমনকে উদ্ধারে তার পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের সহায়তা চাইলে ঘটনা হিতে বিপরীত হয়। ভাই সুমনকে লুকিয়ে রেখেছেন বলে জানান চকবাজার থানার তৎকালীন ওসি আবুল কালাম। এছাড়া সুমন নিজেই নিখোঁজ রয়েছে বলে কটাক্ষ করেন। পরে তৎকালীন পুলিশ কমিশনার আমেনা বেগমের কাছে গেলে সুমন জঙ্গি তৎপরতা ও সন্ত্রাসবাদে জড়িত অথবা কোনো নারীঘটিত ঘটনায় জড়িত আছে বলে জানান। ফেরদৌসীকে গ্রেপ্তার করলে রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে হুমকি দেন। এরপর অতিরিক্ত কমিশনার (ইন্টেলিজেন্স) আবু বকর সিদ্দিকের সাথে যোগাযোগ করেও কোন সুরাহা মেলেনি। তিনিও জানান, সুমন সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত।
নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি
২০২২ সালে ২৯ আগস্ট চট্টগ্রামের দুটি আঞ্চলিক পত্রিকায় সুমনের সন্ধান চেয়ে হারানো বিজ্ঞপ্তি প্রচার করার পর ওই জিডির তদন্ত চেয়ে উচ্চ আদালতে রীট পিটিশন করেন। উচ্চ আদালত থেকে এ জিডি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হলে তৎকালীন ওসি কোন পদক্ষেপ নেননি। পরে একই বছরের ১১ নভেম্বর ওই জিডির তদন্ত চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হলেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ।
বাংলাদেশের পট পরিবর্তনের পর এ ঘটনা তদন্তের জন্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা আদালতে মামলা করতে পরামর্শ দেন। গত ৩১ জুলাই সুমনের লন্ডন প্রবাসী ভাই মো. মিজানুর রহমান দেশে এসে নানা চেষ্টার পর বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের কাছ যান।
তদন্তের নির্দেশ
বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান পতাকানিউজকে বলেন, ‘৭ বছর পর ভাই নিখোঁজের মামলা দায়র করা হয়েছে আদালতে। তবে এতো বছর আসামিদের পক্ষ থেকে হত্যার হুমকি থাকায় তারা কোন আইনী ব্যবস্থা নিতে পরেনেনি। আজ (বৃহস্পতিবার) মামলা দায়ের করতে গেলে আদালত পিবিআইকে মামলা তদন্তের নির্দেশ দেন।’
মামলায় পুলিশকে আসামি না করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট যারা চিহ্নিত, তাদের আসামি করা হয়েছে। তদন্তে পুলিশের সম্পৃক্ততা থাকলে তাদেরও আসামি করা হবে।’
পতাকানিউজ/আরএস/কেএস

