নেপালের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন উত্তপ্ত। সম্প্রতি তরুণদের ‘জেন-জি’ আন্দোলন দেশের রাজনীতিতে ঝড় তুলেছে এবং তাদের প্রধান দাবি হয়ে উঠেছে-নতুন প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কির পদত্যাগ। কিন্তু, ‘জেন-জি’রা আসলে কী চায়?
‘জেন-জি’ আন্দোলন যেটি মূলত নেপালের তরুণদের উদ্যোগে গঠিত- তাদের প্রথম এবং প্রধান দাবি ছিল- সংসদ ভেঙে দিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা। তারা চায় এমন একটি সরকার, যা নেপালের নতুন প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা এবং প্রয়োজনের প্রতিফলন ঘটাবে।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেছে, নেপালে পুরনো রাজনীতিবিদদের দ্বারা পরিচালিত সরকারগুলো তাদের দাবি ও প্রয়োজন উপেক্ষা করেছে। তাদের দাবি, রাজনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে নেপালের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নতুন করে সাজানো হোক।
নতুন প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি, যাকে ‘জেন-জি’ আন্দোলনের পর পছন্দের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল এখন তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে।
কেন এই প্রতিবাদ? কারণ, সুশীলা কার্কি সরকারে আসার পর তিনি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী নিযুক্ত করেন এবং যাদের নিয়োগের আগে ‘হামি নেপাল’ গ্রুপের সাথে আলোচনা করা হয়নি। এই নিযুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে তরুণরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং সুশীলা কার্কির পদত্যাগের দাবি জানায়।
তাদের অভিযোগ, সুশীলা কার্কির নেতৃত্বে বর্তমান সরকার তরুণদের কাছ থেকে দূরে চলে গেছে এবং রাজনৈতিক অভ্যন্তরীণদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে।
‘হামি নেপাল’ গ্রুপের নেতা সুদান গুরুং এরই মধ্যে সুশীলা কার্কির শপথ নেওয়ার দুই দিনের মধ্যেই তার পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসেন। সুদান গুরুং এর ভাষ্য অনুযায়ী, সুশীলা কার্কির মন্ত্রী নিয়োগপ্রক্রিয়া অত্যন্ত অসাংবিধানিক এবং পুরনো রাজনৈতিক শাসন ব্যবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে যা তারা মেনে নেবে না।
‘জেন-জি’ আন্দোলন শুধু একটি রাজনৈতিক পরিবর্তন চাইছে না, তারা চায় নেপালে যুবকদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হোক। তারা চায় এমন একটি সরকার গঠন হোক, যা তরুণদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবে, পরিবর্তন আনবে এবং পুরনো দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থাকে হটিয়ে নতুন নেতৃত্বের সুযোগ দেবে।
‘জেন-জি’রা প্রধানত দাবি করছে, নেপালের সাংবিধানিক কাঠামো এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। তারা সুশীলা কার্কির নেতৃত্বে সরকারের কাজের প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে এবং এটিকে একটি তরুণ্যভিত্তিক, অপরাজিত রাজনৈতিক দল দ্বারা পরিবর্তনের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ‘জেন-জি’ আন্দোলন তাদের দাবি আদায় করতে পারবে কি না? নেপালের রাজনীতিতে তরুণদের শক্তি এবং তাদের আন্দোলন যে একটি বড় ভূমিকা রাখছে, তা স্পষ্ট। সুশীলা কার্কি সরকার এই চাপ মোকাবিলা করতে পারবে কি-না, তা সময়ই বলবে।
তবে, নেপালের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই তরুণদের দাবি মেনে নেওয়া এবং একটি নতুন, পরিবর্তনশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত করার ওপর। ‘জেন-জি’রা এখন সরকারের কাছে একটি সুযোগ চাইছে যাতে নতুন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির সূচনা হয়।
পতাকানিউজ/এসকে

