রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়–১ বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) এক বিস্তৃত মামলার নথি জমা দিয়েছে, যেখানে মূল আসামি হিসেবে রয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ। অভিযোগ—৬০ কোটি টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সাড়ে ৫৭ কোটি টাকা বিদেশে পাচার।
দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন নিশ্চিত করেছেন, মামলার এজাহারে সজীব ওয়াজেদের নামে স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৫৪ কোটি ৩৯ লাখ ২০ হাজার ৯৭৮ টাকা এবং এফডিআর, আসবাবপত্র, নগদ অর্থ ও ব্যাংক হিসাবসহ অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৬ কোটি ৭৮ লাখ ৮৪ হাজার ৮৯১ টাকা। সব মিলিয়ে তার মোট সম্পদ দাঁড়ায় ৬১ কোটি ১৮ লাখ ৫ হাজার ৮৬৯ টাকা।
তদন্তে দেখা যায়, তার স্বীকৃত বৈধ আয় মাত্র ১ কোটি ৩২ লাখ ৮ হাজার ৫৪২ টাকা। অর্থাৎ ৬০ কোটি ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৯৭০ টাকার সম্পদের উৎসের সঙ্গে বৈধ আয়ের কোনো সামঞ্জস্য পাওয়া যায়নি। দুদকের দাবি, সরকারি দায়িত্বে থাকার সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই সম্পদ অর্জিত হয় এবং হুন্ডি বা অন্যান্য মাধ্যমে অর্থ পাচার করে যুক্তরাষ্ট্রে দুটি বাড়ি কেনা ও বিনিয়োগ করা হয়, যার মূল্য ৫৪ কোটি ৪ লাখ ৩২ হাজার ২৫৮ টাকা। এই অর্থ বাংলাদেশের আয়কর নথিতে উল্লেখ করা হয়নি।
তাছাড়া, সজীব ওয়াজেদ নিজের নামে দুটি ব্যাংক হিসাবে ৩ কোটি ৪৬ লাখ ২২ হাজার ৫৭ টাকা লেনদেনসহ মোট ৫৭ কোটি ৫০ লাখ ৫৪ হাজার ৩১৫ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। এসব ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এটি একক মামলা নয়—দুদক একই দিনে রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৬০ কাঠা জমি বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে শেখ হাসিনা ও পরিবারের আরও সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে দিয়েছে। এই মামলায় আসামি সাতজন—শেখ হাসিনা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিক, এবং ভাগ্নে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক।
দুদক জানিয়েছে, সায়মা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তহবিলে অর্থ নেওয়ার অভিযোগে তদন্ত চলছে। টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ঘুষ হিসেবে গুলশানে একটি ফ্ল্যাট নেওয়ার অভিযোগের পৃথক মামলারও তদন্ত চলছে। এছাড়া গত ২৭ জুলাই শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৮৯ লাখ ৩ হাজার ৩৫৫ টাকার অবৈধ সম্পদ এবং ১২ কোটি ৪৮ লাখ ৪০ হাজার ৫৪৯ টাকার অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করা হয়।
এই ধারাবাহিক মামলাগুলো শুধু আর্থিক অনিয়ম নয়, রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারের চিত্রও তুলে ধরছে, যা এখন অনুসন্ধান ও বিচারিক প্রক্রিয়ার কেন্দ্রে অবস্থান করছে।
পতাকানিউজ/এনটি

