‘মাননীয় প্রধান বিচারপতি মনে রাখবেন আপনিও কিন্তু কনটেম্পট অব কোর্টের ঊর্ধ্বে নন’ বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়রাম্যানের মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
আজ শনিবার (০৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নোয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতিতে এক মতবিনিময়সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, লইয়ারদের বিরুদ্ধে কনটেম্পট হয় জাজদের বিরুদ্ধে কেন হয় না আপনাদের সদয় বিবেচনার জন্য বলছি, আজকের বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি যেদিন উনার আসনে আসীন হলেন, আমি বলেছিলাম মাননীয় প্রধান বিচারপতি আপনার বিচারকদের বলে দেবেন, আমার কোনো লইয়ার যেন কোনো বিচারক দ্বারা অসম্মানিত না হয়। আমি বলেছিলাম, বাংলাদেশের প্রায় ৮০ হাজার লইয়ার আপনার আদালতে কর্মকর্তা। উনি প্রিজাইডিং বা জাজ হিসেবে কোনো লইয়ারের সাথে দুর্ব্যবহার করতে না পারে এটা আপনি খেয়াল রাখবেন। সাথে সাথে বলেছিলাম, মাননীয় প্রধান বিচারপতি মনে রাখবেন আপনিও কিন্তু কনটেম্পট অব কোর্টের (আদালত অবমাননা) ঊর্ধ্বে নন।
তিনি আরো বলেন, আপনার বিচারপ্রক্রিয়ায় আপনাদের বিচারপ্রক্রিয়ায়, কোনো জাজের বিচারপ্রক্রিয়ায় এমন কোনো ধারণা যদি তৈরি হয় মানুষের মাঝে আদালতে গেলে ন্যায় বিচার পাওয়া যাবে না, আদালত মানুষের নির্যাতনকে প্রশ্রয় দেয়। কোনো বিচারকের এই ধরনের আচরণের কারণে যদি বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের অনাস্থা তৈরি হয়। তাহলে ওই বিচারক আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হবেন। উদাহরণ হিসেবে বলেছিলাম এ দেশের কুলাঙ্গার বিচারপতি খাইরুল হক, সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, এদেশের কুলাঙ্গার বিচারপতি মানিক সারা বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার সম্পর্কে মানুষের মধ্যে যে অনাস্থা সৃষ্টি করেছিল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে যে ধরনের বিচারব্যবস্থা আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছিল আমি বলেছিলাম এখান থেকে আদালত অবমাননার দোষী সাব্যস্ত হওয়া শুরু হোক। সে কারণে আমি আশ্বস্ত করতে চাই, আমরা যারা কাজ করছি তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে থেকে আইনজীবীদের জন্য অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে কাজ করব। এটা আমাদের প্রত্যয়।

নোয়াখালী সম্পর্কে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, নোয়াখালী বাংলাদেশের সব থেকে সম্পদশালী জেলা। অর্থনৈতিক ভাবে, বাংলাদেশ স্বাধীনতা থেকে শুরু করে সব কিছুতেই এগিয়ে। আমি সেই জেলার আইনজীবীদের সামনে কথা বলছি। এই নোয়াখালীর মধ্যে ছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন, ভাষাশহীদ আব্দুস সালামসহ আরো অনেকে। এই নোয়াখালীর একজন কৃতি সন্তান ছিলেন আইন বিভাগের ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। অনেকের অনেক মত পার্থক্য থাকতে পারে পছন্দ অপছন্দ থাকতে পারে। বিচার ব্যবস্থায় আমরা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ থেকে শিখেছি কিভাবে আইনি প্রক্রিয়ায় লড়তে হয়।
তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবে আবু সায়েদ, মুগ্ধ, আনাসদের মতো শহীদের বিনিময়ে আমরা ৫ আগষ্ট পরবর্তী এই বিচার বিভাগে স্বাধীনভাবে কাজ করছি। আমরা বলেছি যাদের বিরুদ্ধে ন্যূনতম দুর্নীতি আছে বিচার বিভাগে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে অ্যাডভোকেটরা মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত তাদের সুপ্রিম কোর্টের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছি। আমরা বার কাউন্সিল এর পরীক্ষার ক্ষেত্রে কঠোরভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছি। বার কাউন্সিল পরীক্ষা প্রশ্ন ফাঁসের একটা রিউমার ছিল। সেটার বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি নির্ধারণ করেছি। আমি অভিযান করে অসাধু প্রশ্ন ফাঁসকারীদের গ্রেপ্তার করেছি। আমাদের দেশে এখন ব্যাঙের ছাতার মতো বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটা প্রচলিত কথা আছে সন্তান যদি মায়ের কাছে বায়না না ধরে কিছু পাওয়া যায় না। সারা দেশের অ্যাডভোকেটরা একসাথে আওয়াজ তুলুন আপনাদের ন্যার্য দাবির জন্য। আপনাদের সংগ্রাম করতে হবে। রাষ্ট্রের আইনজীবী হিসেবে আমি আপনাদের সাথে আন্দোলনে একমত পোষণ করব। আমরা আরেকটা কথা বলতে চাচ্ছি বার কাউন্সিলদের মধ্যে সারা বাংলাদেশের অনলাইনের মাধ্যমে ট্রেনিং দেওয়ার ব্যবস্থা করব। বার কাউন্সিলর মধ্যে পিপি, এপিপি যারা দুর্নীতি করবেন তাদের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ আসে আপনার চাকরি যাবে। সাথে আপনার বার কাউন্সিল বাতিল করব।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এরকম একটা ঘটনা পটুয়াখালী জেলায় ঘটেছে। সেখানকার পিপি ৫০ হাজার টাকার ঘুষ নিয়েছিল তার জন্য তাকে পানিশমেন্ট দিয়েছি। আমরা শপথ নেওয়ার পর বলেছি আমরা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করব। আমরা একটা স্বচ্ছ বিচারব্যবস্থা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। জুলাই বিপ্লবের পর নতুন বাংলাদেশে বার কাউন্সিলের দায়িত্ব নেওয়ার পর আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল আইনি প্রক্রিয়াকে সমৃদ্ধ করা এবং সমাজে আইনজীবীদের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। এই উদ্দেশ্যে প্রথম ধাপ হিসেবে বার কাউন্সিলের নিয়মিত পরীক্ষা নেওয়া শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত সবচেয়ে স্বচ্ছ পরীক্ষার মাধ্যমে বার কাউন্সিল এগোচ্ছে। পরীক্ষার আগের দিন স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হয়েছে, যারা প্রশ্নপত্র বিক্রি করছিল তাদের বিরুদ্ধে। দল-মত নির্বিশেষে আইনজীবীরা যেন সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছাতে পারেন, সেই প্রচেষ্টা বার কাউন্সিল অব্যাহত রাখবে।

তিনি বলেন, দুর্নীতি ও অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে, আমাদের কমিউনিটির কেউ হলেও পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ১৫ হাজার কোটি টাকা আদালত থেকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়। আইনজীবীদের সুরক্ষার জন্য বেনোভেলেন্ট ফান্ড বিচার বিভাগের জন্য সরকারি বরাদ্দ প্রতিবছর মাত্র ৫০০ কোটি টাকা, যা যথেষ্ট নয়। জনপ্রশাসন ও আইন সচিবের সঙ্গে আলোচনার পর ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। আমরা প্রস্তাব দেব বাজেটের ১৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে অন্তত তিন হাজার কোটি টাকা বিচার বিভাগের জন্য বরাদ্দ করা হোক।
নোয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে নোয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আমির হোসাইন বুলবুলের সঞ্চালনায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির (চট্টগ্রাম বিভাগ) সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যরিষ্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, নোয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব আলমগীর আলো, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব হারুনুর রশিদ আজাদ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার আবু সায়েম, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও নোয়াখালী জেলা আমির ইসহাক খন্দকার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এসময় আইনজীবী, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষেরা উপস্থিত ছিলেন।
পতাকানিউজ/আইবিএম

