সময় বাড়ানো হয়েছে দুদফা। এরপরও শেষ হয়নি কাজ। ঢিমেতালে চলছে বগুড়ার করতোয়া নদীর ফতেহ আলী সেতুর পুনর্নির্মাণ কাজ। এতে চার উপজেলার প্রায় ১২ লাখ মানুষকে পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। একসময় উত্তরবঙ্গের অন্যতম ব্যস্ত এ সংযোগ সেতু এখন পরিণত হয়েছে জনদুর্ভোগে। প্রশ্ন উঠেছে, এ সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে কবে?
বগুড়া সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৬২ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সেতুটি নির্মাণ করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ক্ষতিগ্রস্ত সেতুর কিছু অংশ মেরামত করা হয়। এরপর দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ২০১৮ সালে সওজ এটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। তখন ভারী যান চলাচল বন্ধ করতে দুপ্রান্তে বাঁশের খুঁটি বসানো হয়। তবে রিকশা ও মানুষের যাতায়াত ছিল। তবে ভারী যানবাহনকে বিকল্প পথে প্রায় ৫ কিলোমিটার ঘুরে গন্তব্যে যেতে হতো।
এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পর প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২৩ সালের ১৫ মে ফতেহ আলী সেতু পুনর্নির্মাণের কার্যাদেশ পায় মেসার্স জামিল ইকবাল নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কার্যাদেশে দুপাশে আড়াই মিটার করে ফুটপাতসহ ৬৯ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থের সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা বছরের মধ্যেই। কিন্তু ওই সময়সীমার অতিরিক্ত আরও ১৪ মাস পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি কাজ।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, প্রথম কার্যাদেশে ২০২৪ সালের মে মাসে নির্মাণকাজ শেষ করার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এরপরও কাজ শেষ হয়নি। এ বছরের গত ১৭ এপ্রিল থেকে সেতুটি হাঁটার জন্য খুলে দেয়া হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, সেতুর ওপর কিছু মোটরসাইকেল ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে নিয়মিত। তবে রিকশা কিংবা অন্য কোনো যানবাহন চলতে পারছে না। এখনও ব্রিজের মূল অবকাঠামো, ফুটপাত, রেলিং ও সংযোগ সড়ক অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। এতে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। ফলে স্থানীয়দের পাশাপাশি পূর্ব বগুড়ার কৃষি ও ব্যবসায়িক পণ্য পরিবহনে অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। স্থানীয়রা দ্রুত সেতুর কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে কাজ পুরোপুরি শেষ না হলেও সেতুর ওপর বসেছে অস্থায়ী দোকান। মাঝেমধ্যে এসব দোকান উচ্ছেদে অভিযান চালানো হলেও কিছুদিন পর আবার দখল হয়ে যায়। এতে সেতুর দুপাশে তীব্র যানজট তৈরি হয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আমিনুর রহমান বলেন, ‘সেতুর কাজ শেষ না হওয়ায় ব্যবসায়িক পণ্য পরিবহন খরচ দ্বিগুণ হয়ে গেছে।’
কৃষক জামিল ইসলাম বলেন, ‘ধান আর সবজি বাজারে নিতে অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হচ্ছে। এখন ব্রিজের ওপর দোকান বসায় হেঁটে চলাও কঠিন হয়ে পড়েছে।’
চেলোপাড়া এলাকার বাসিন্দা আজমল সরকার বলেন, ‘সেতুর নির্মাণকাজ নিয়ে যেন নাটক চলছে। সেতুতে হাঁটার জন্য পথ খুলে দেওয়া হলেও দুপাশে ফাঁকা থাকায় ঝুঁকি রয়ে গেছে।’
জানতে চাইলে বগুড়া বগুড়া সড়ক ও জনপথের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুর আহমেদ বলেন, ‘বর্ষার পানি, ভূগর্ভের শক্ত পাথরের স্তর ও ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতায় কাজ বিলম্বিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গত ১ জানুয়ারি মেয়াদ বাড়ানোর জন্য চিঠি পাঠানো হলেও এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।’ তবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি ২০ শতাংশ কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পতাকানিউজ/পিএম/আরবি

