বিতর্ক যেন নাসুম আহমেদের নিত্যসঙ্গী। কয়েক বছর আগে তিনি ছিলেন এক সিনিয়র ক্রিকেটারের রোষের শিকার। আরও একবার সাবেক প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের কথিত চড় খাওয়ার ঘটনাতেও আলোচনায় আসেন তিনি। সেই ঘটনায় এক বছর ক্রিকেটের বাইরে থাকতে হয়েছিল নাসুমকে। তবে ফেরার ম্যাচেই (আফগানিস্তানের বিপক্ষে) ২৪ বলে ২৫ রান করার পাশাপাশি নিলেন ৩ উইকেট, সেদিনও দলের নায়ক হয়েছিলেন।
এবারও এক অফ-ফিল্ড বিতর্ক নিয়েই এশিয়া কাপে দলে ফিরলেন নাসুম। বাংলাদেশ দল আবুধাবিতে নামার পরপরই ব্যক্তিগত একটি বিষয় নিয়ে তাকে প্রকাশ্যে ব্যাখ্যা দিতে হয়েছিল। গণমাধ্যমে যেভাবে বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছিল, বাস্তবে তা আরও জটিল ছিল বলে জানাতে হয় নাসুমকে। সেই ঘটনায় বেশ ভেঙে পড়েছিলেন তিনি—ব্যাখ্যা দেওয়ার সময় তার কণ্ঠেই সেটা স্পষ্ট ছিল।
তবে হাতে বল ধরলেই যেন অন্য মানুষ নাসুম আহমেদ। মঙ্গলবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে তার দুর্দান্ত বোলিং (৪ ওভারে ১১ রানে ২ উইকেট) বাংলাদেশকে এশিয়া কাপে টিকে থাকার লড়াইয়ে ফিরিয়ে আনে। অন্তত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাঁচল বাংলাদেশের আশা। আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে অনুকূল ফল (এবং নেট রান রেটের সমীকরণ) মিললে দ্বিতীয় ধাপে যাওয়ার দরজা খুলে যাবে বাংলাদেশের জন্য।
আসলে আফগানিস্তানের রেকর্ড বলছে—তারা বড় টুর্নামেন্টে ১৫০+ রান তাড়া করে জেতার নজির রাখে না। কিন্তু আবুধাবিতে ইনিংস বিরতির সময়েও তাদের দিকেই ছিল ম্যাচের গতি। শেষ পাঁচ ওভারে মাত্র ৩৫ রান নিতে পেরেছিল বাংলাদেশ। তাই প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলতে শুরুর উইকেট ছিল একমাত্র উপায়।
সেখানেই এলেন নাসুম। ইনিংসের প্রথম বলেই ফিরিয়ে দিলেন সেদিকুল্লাহ আতালকে। বলটা ভেতরে ঢুকে গিয়ে সরাসরি আঘাত হানে তার পায়ে। এতটাই নিশ্চিত এলবিডব্লিউ ছিল যে, রিভিউ নিতেও যাননি আতাল। প্রথম ওভারেই উইকেট-মেইডেন। এরপর তৃতীয় ওভারে ফের আঘাত—ইব্রাহিম জাদরানের ব্যাকপ্যাডে আঘাত হেনে ফেরালেন তাকেও।
তবে এরপর আর তাকে ব্যবহার করেননি অধিনায়ক লিটন দাস, যতক্ষণ না মুস্তাফিজুর রহমান ১৭তম ওভারে ১৪ রান খরচ করে ফেলেন। তখনই আক্রমণে এনে আবারও সাড়া দিলেন নাসুম। যদিও এবার রান-আউট—কৃতিত্ব বেশি নুরুল হাসানের, যিনি ঝলমলে এক থ্রোতে ফেরালেন করিম জানাতকে। সেই ওভারে মাত্র চার রান দেন নাসুম, আফগানিস্তানের সামনে তখন পাহাড়সম সমীকরণ। শেষ পর্যন্ত যা তারা টপকাতে পারেনি।
ম্যাচের চিত্র
নাসুমের দুর্দান্ত স্পেল: ৪-ওভারে ১১ রান, ২ উইকেট, ১৬টি ডট বল। রিশাদ হোসেন: ২ উইকেট। তাসকিন ও মুস্তাফিজ: মিলিয়ে ৫ উইকেট। যদিও পঞ্চম বোলারের কোটা ৪ ওভারে গিয়েছিল ৫৫ রানে, তবুও অভিজ্ঞ বোলিং আক্রমণের কারণেই বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত জয় তুলেছে।
তানজিদ হাসান ম্যাচ শেষে বলেন— ‘প্রতি বার নাসুম একাদশে ফেরে, সে প্রভাব ফেলে। আজও প্রথম ওভার থেকেই ম্যাচের চিত্র পাল্টে দিয়েছে। আমরা আসলে তার বোলিংয়েই জিতেছি। দলের সবাই সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে, তিনিও ট্রেনিং থেকে ম্যাচ—সব জায়গায় শতভাগ দেন।’
ব্যাটিংয়ে শুরুর জুটি
বাংলাদেশও এ ম্যাচে শুরুটা করেছিল ইতিবাচক। তানজিদ ও সাইফ হাসানের জুটিতে আসে ৬৩ রান। তানজিদ অর্ধশতক হাঁকান। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগের ম্যাচে শুরুতে দুই উইকেট-মেইডেন খেলার পর এবার মানসিকতায় বড় পরিবর্তন দেখা যায়। পারভেজ হোসেনকে বসিয়ে সুযোগ পাওয়া সাইফও জুটিতে অবদান রাখেন।
তানজিদের ভাষায়— ‘আমরা প্রথম দুই ওভার নিয়ে কথা বলেছিলাম। পরপর দুই ওভারে বাউন্ডারি পেয়ে আত্মবিশ্বাস এসেছিল। অতীত নিয়ে চিন্তা করিনি, ওটা আর ফিরবে না। আমি ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করেছি। পাওয়ারপ্লেতে ঝুঁকি নিতেই হয়, আমি যতটা সম্ভব বাউন্ডারির খোঁজে ছিলাম।’
নেট রান রেটের কথা মাথায় রেখেছিল দল, তবে তা বাড়ানোর চেষ্টা পুরোপুরি কাজে লাগেনি বলে জানান তিনি। ‘আমাদের সুযোগ ছিল নেট রান রেট বাড়ানোর। তবে করতে পারিনি। তবুও জয়টাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা সেটায় খুশি।’
এখন প্রয়োজন ক্যালকুলেটর
বিদেশের মাটিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টি২০ জিতলো বাংলাদেশ। এখন আগামীকাল বৃহস্পতিবার শ্রীলংকা-আফগানিস্তান ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে লিটন দাসের দলকে। সে ম্যাচে রশিদ খানের দল জিতলে দেশে ফিরে আসতে হবে টিম টাইগার্সকে। আর যদি শ্রীলংকা জিতেও, তবু্ও নেট রান রেট হিসেবের জন্য বাংলাদেশ দলকে বসতে হবে ক্যালকুলেটর হাতে।
সূত্র: ইএসপিএনক্রিকইনফোডটকম
পতাকানিউজ/কেএস

