টানা কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢলের প্রভাবে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে উঠেছে। লালমনিরহাট ও নীলফামারীর নদীতীরবর্তী এলাকায় হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন এবং অনেকেই নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের চেষ্টা করছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দুপুর ১২টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ৫২.৩৩ মিটার উচ্চতায় পৌঁছেছে। বিপৎসীমা ৫২.১৫ মিটার, অর্থাৎ পানি সীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে।
বুধবার (১৩ আগস্ট) সকালে পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপরে উঠেছিল, পরে তা কিছুটা কমে ৪ সেন্টিমিটার হয়ে আসে। তবে রাতের বর্ষণ ও উজানের ঢলের কারণে বৃহস্পতিবার পানি আবারও বৃদ্ধি পেয়ে ১৮ সেন্টিমিটার উপরে গেছে।
লালমনিরহাটের আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, সদর ও পাটগ্রাম উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলোতে প্লাবনের ঘটনা দেখা দিয়েছে। তিস্তার বাম তীরবর্তী এলাকায় তৃতীয় দফায় বন্যার ক্ষতি রেকর্ড করা হয়েছে। ডুবে গেছে গ্রামীণ সড়ক, বসতভিটা, ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং গবাদি পশুর খামার।
গোবর্ধন এলাকার বাসিন্দারা জানান, পানি ধীরে ধীরে বাড়ছে। রান্না-বান্না বন্ধ হয়ে গেছে, স্কুলগামী শিশুদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে, এবং স্থানীয়রা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। কৃষকরা নিচু এলাকায় ফসল ও পশুপাখি রক্ষা করতে পারছেন না এবং প্রশাসনের জরুরি সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন।
নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখাড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ি এবং জলঢাকার গোলমুল্লা, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলগুলোতে পানি প্রবেশ করেছে। এতে অন্তত ২৫ গ্রামে ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এসব পরিবার ধীরে ধীরে উঁচু স্থানে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন।
ডিমলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানান, রাত থেকে পানি বাড়ছে এবং তারা এখন ঘরবাড়ি ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নদী তীরবর্তী বড় গ্রামগুলোতে এক হাজার ২০০ পরিবার নিরাপদ স্থানে সরানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটে চলেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যারেজের সব ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। নেমে আসা পানি ও প্লাবনের আশঙ্কায় স্থানীয়দের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে।
বাসস-
পতাকানিউজ/এনটি

