ভবনে ফাটল, উঠে গেছে পলেস্তারা এবং দেবে গেছে পিলারও। এমন অবস্থায় ২০২৩ সালে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয় ফটিকছড়ির কাঞ্চননগর ডলু রাবারবাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন। ঘোষণার দুবছর পার হলেও এখন নির্মাণ হয়নি নতুন ভবন। এতে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান। প্রতিদিন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাশাপাশি আতঙ্কে দিন পার করছেন অভিভাবকরাও। তবে নতুন ভবন নির্মাণে কর্তৃপক্ষের কাছে জরুরি ভিত্তিতে প্রস্তাব পাঠাবেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।’
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনটি নির্মিত হয় ১৯৯৪ সালে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ভবন নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হয়েছিল নিম্নমানের সামগ্রী। ফলে মাত্র ৩০ বছরে ভবনটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ২০২৩ সালে বিদ্যালয়ের দক্ষিণাংশে একটি সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করে পাঠদান করলেও সেটিও এখন ভগ্নদশায়। ফলে শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে সেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের দুই কক্ষ ব্যবহার করে পাঠদান চলছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়টি চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের পাশঘেঁষা হলেও নেই সীমানা প্রাচীর। এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় শিক্ষার্থীদের মাঠে খেলাধুলার সুযোগ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া অস্বাস্থ্যকর শৌচাগারের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতেও রয়েছে শিক্ষার্থীরা। সীমানা প্রাচীর, ওয়াশব্লক না থাকা ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনসহ রয়েছে আসবাবপত্রের ঘাটতি। ফলে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ভর্তি করাতে চান না এ বিদ্যালয়ে। ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতিও একেবারে নগণ্য।
বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়ক ঘেঁষে কাঞ্চননগর রাবারবাগান এলাকায় ৩৩ শতাংশ জায়গার ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমে কমিউনিটি স্কুল, পরে ২০০৯ সালে রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পায়। ২০১৩ সালের জুলাইয়ে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। বর্তমানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ১০০ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদানে ৬ শিক্ষকের মধ্যে নিয়োজিত আছেন ৪ জন। এর মধ্যে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য ১০ বছর ধরে।
৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. সিফাত, তৃতীয় শ্রেণির ফারজানা আক্তার জানায়, ‘বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে, বই-খাতা ভিজে যায়। মাঝেমধ্যে ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে। প্রতিদিন ভয়ে ক্লাস করতে হয়। কখন মাথার ওপর ছাদ ধসে পড়ে– এ আতঙ্কে থাকি।’

অভিভাবক রসুল আমীন বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সন্তানকে পড়তে পাঠাতে ভয়ে থাকি। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও ভবন সংস্কার করা হচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে সন্তানকে অন্য বিদ্যালয়ে বদলি করা ছাড়া উপায় থাকবে না।’
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জুবেদা খানম বলেন, ‘ভবনের অবস্থা এতটাই খারাপ যে প্রতিদিন আতঙ্কের মধ্যে ক্লাস নিতে হয়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য এটি নিরাপদ নয়। কক্ষ সংকটে একটি কক্ষেই শ্রেণি ও দাপ্তরিক কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে।
বৃষ্টি হলে টিনশেডের ঘরটিতে পানি পড়ে। নতুন ভবন নির্মাণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তবে কোনো সুরাহা হয়নি। একটি ভবন পেলে এই দুঃখ লাঘব হবে।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হাছান মুরাদ চৌধুরী বলেন, ‘বিদ্যালয়টি খুবই ঝুঁকিপুর্ণ। নতুন ভবন নির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে জরুরি ভিত্তিতে প্রস্তাব পাঠাবো।’
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিদ্যালয়টির ভবন ভগ্নদশায় রয়েছে বলে আমরা অবগত। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হবে।’
পতাকানিউজ/ওএআর/এএইচ

