নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)। যেখানে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে সময় পার করে রোগী। সেখানে চারপাশে শুধুই বেঁচে থাকার লড়াই। এবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে দেখা গেল ভিন্ন এক দৃশ্য। মন খারাপের দেয়ালের মাঝে একটু হাসি, আর একটু ভালোবাসা। দেড় মাস আইসিইউর বেডে থাকা আরাফাত নামের এক তরুণের জন্মদিন পালন করে আনন্দ ও ভালোবাসার অনুভূতি প্রকাশ করলেন চিকিৎসক-নার্সরা। এ আনন্দের মুহূর্তের ছবি-ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দেড় মাস আগে চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে কিডনি সমস্যা নিয়ে ভর্তি আছেন আরাফাত। ২৯ নম্বর বেডে থেকে দীর্ঘদিনের চিকিৎসায় তার শরীর ক্লান্ত। আজ থেকে আরও ২ দিন আগে তিনি ১৯ পেরিয়ে ২০-এ পা রাখলেন। তার জন্মদিবসের দিনে যদি একটুখানি ভালো লাগা আসে! অসুস্থতার কারণে এর আগে কখনও জন্মদিন পালন করা হয়নি তার। তাই এই প্রথম আইসিইউ’র কাঁচঘেরা কক্ষে আরাফাত ছোট্ট একটা স্বপ্ন বুনেছিলেন চিকিৎসক, কনসালটেন্ট, নার্স আর হাসপাতালের সবাই মিলে একসঙ্গে জন্মদিন পালন করার।
আরাফাতের সেই ইচ্ছে জানার পর শত ব্যস্ততার মাঝেও সময় বের করেন সবাই। ছোট্ট একটি কেক আর হ্যান্ড গ্লাভস ফুলিয়ে বানানো হয় বেলুন। আর এসব নিয়েই হয়ে উঠল ভিন্নরকম একটি ভালোলাগার মুহূর্ত। স্মরণীয় হয়ে থাকল দিনটি, হাসি ফুটেছে আরাফাতের মুখে। তার সঙ্গে হেসেছেন অন্যরাও।

জানতে চাইলে আইসিইউ ইউনিটের শিফট ইনচার্জ রিংকু দেওয়ানজী ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘এ পেশায় প্রতিদিন মৃত্যু দেখতে হয়। যারা আমাদের কাছে সেবা নিতে আসে আমরা তাদের আমদের পরিবারের একজন হিসেবে দেখি। এতে আমদের আত্মিক বন্ধন আরও দৃঢ় হয়। মাঝে মাঝে এমন ছোট্ট মুহূর্ত আমাদেরও মানুষ হয়ে ওঠায়। স্বাস্থ্যসেবা শুধু ওষুধ বা চিকিৎসায় সীমাবদ্ধ নয়, মানবিক স্পর্শও চিকিৎসার অংশ। আজ সেটাই প্রমাণ করল আমাদের টিম।’
আরাফাতের মুখে সেই প্রথম হাসি দেখা গেল অনেকদিন পর। কণ্ঠে ক্লান্তি থাকলেও চোখে ছিল আনন্দের ঝিলিক। তার মা বলেন, ‘ছেলের মুখে এতদিন পর হাসি দেখে মনে হলো হয়ত আমরা আবার তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে পাব।’
পতাকানিউজ/এএস/আরবি

