গাজা উপত্যকায় সোমবারের সূর্যোদয় হয়েছিল আগের দিনের মতোই গোলার শব্দে। কিন্তু দিনশেষে যে চিত্র উঠে এসেছে, তা আরও ভয়াবহ। ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর টানা গোলাবর্ষণে অন্তত ৬৯ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ৩৬২ জন। স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সোমবার (১১ আগস্ট) সন্ধ্যার পর এসব তথ্য প্রকাশ করলেও, বাস্তব চিত্র হয়তো এর চেয়েও মর্মান্তিক।
২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া আইডিএফ অভিযানে এখন পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার ৪৯৯ জনে, আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৭৫ জন। কিন্তু এই পরিসংখ্যান কেবল সেইসব মানুষের, যাদের দেহ বা আহত অবস্থায় হাসপাতালে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে, সড়কে বা বোমাবিদ্ধ ঘরে পড়ে থাকা অসংখ্য লাশ কোনো হিসাবের খাতায় নেই—কারণ উদ্ধারযন্ত্র নেই, আর আছে নিরবচ্ছিন্ন বোমাবর্ষণ।
অভিযান শুধু প্রাণই কেড়ে নিচ্ছে না, গাজাবাসীর মুখের আহারও কেড়ে নিয়েছে। ইসরায়েলের অবরোধে খাদ্য ও ত্রাণ প্রবেশ সীমিত হওয়ায় উপত্যকাজুড়ে এখন দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, গত দেড় বছরে অপুষ্টি ও খাদ্যাভাবে মারা গেছেন ২২২ জন—এদের মধ্যে ১০১ জন শিশু। সোমবারও খাদ্যাভাব ও অপুষ্টিজনিত কারণে এক শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে ত্রাণ নিতে যাওয়ার পথও হয়ে উঠেছে মৃত্যুর ফাঁদ। ত্রাণ সংগ্রহে আসা ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। এই পথে প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ৭৭২ জন। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এই হতাহতের সংখ্যাও মোট প্রাণহানির হিসাবের মধ্যে রেখেছে।
এই সংঘাতের সূত্রপাত ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, যখন হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে ঢুকে গুলি চালিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। প্রতিশোধের অজুহাতে সেদিনই শুরু হয় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান। ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চালানোর পর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়, কিন্তু মাত্র দুই মাস পরই, ১৮ মার্চ, ফের অভিযান শুরু করে আইডিএফ। দ্বিতীয় দফায় গত পাঁচ মাসে নিহত হয়েছেন প্রায় ১০ হাজার ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন আরও ৪১ হাজারের বেশি।
এখনও অন্তত ৩৫ জন জিম্মি জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের উদ্ধারের অজুহাতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়ে দিয়েছেন, হামাস পুরোপুরি ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত অভিযান বন্ধ হবে না।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘ একাধিকবার গাজায় হামলা বন্ধের আহ্বান জানালেও তাতে কর্ণপাত করেনি তেল আবিব। ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলা চলছে, কিন্তু ময়দানের বাস্তবতায় প্রতিদিন যোগ হচ্ছে নতুন নতুন মৃত্যুর সংখ্যা—যেখানে গোলার শব্দের চেয়ে মানুষের আর্তনাদ এখনো নীরব হয়নি।
আনাদোলু এজেন্সি-
পতাকানিউজ/এনটি

