চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সর্বশেষ সামরিক কুচকাওয়াজে তাঁর পাশে ছিলেন না দেশটির পূর্বসূরিরা, যা নিয়ে নতুন আলোচনা তৈরি হয়েছে। চীনা নেতাদের পরিবর্তে এবার মঞ্চে দেখা গেছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আর উত্তর কোরিয়ার কিম জং উনকে।
২০১৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির বার্ষিকী উপলক্ষে প্রথম কুচকাওয়াজ আয়োজন করেছিলেন শি চিনপিং। সেসময় তাঁর পাশে ছিলেন দুই সাবেক নেতা। উদ্দেশ্য ছিল নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা দেখানো। তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা শি ইতোমধ্যে ক্ষমতার দৌড়ে সরিয়ে দিয়েছেন সব বিরোধী পক্ষকে।
কুচকাওয়াজের আগে শি অংশ নেন সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সম্মেলনে। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক এবং সম্প্রতি তিব্বত সফর করেন তিনি। এসব কূটনৈতিক তৎপরতা শির স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে যে জল্পনা ছিল, তা খানিকটা প্রশমিত করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব পদক্ষেপ দেশের অর্থনৈতিক মন্দা থেকে মানুষের মনোযোগ সরিয়ে নিতে সহায়ক। এমনকি একটি গোপন রেকর্ডিংয়ে শি ও পুতিনকে গেছে দীর্ঘায়ু ও অঙ্গ প্রতিস্থাপন নিয়ে আলাপ করতে শোনা যায়।
এবারের কুচকাওয়াজে নজর কেড়েছে শির পোশাক। নিজেকে প্রবীণ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে উপস্থাপন করতে মাও সে–তুংয়ের মতো ধূসর স্যুট পরে হাজির হন তিনি। বিপরীতে তাঁর সহকর্মীরা ছিলেন কালো স্যুটে।
এদিকে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের ক্ষমতা কমে যাওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে সাম্প্রতিক সময়ে। তাঁকে পাঠানো হয় তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, তারা উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বে জোর দিচ্ছে। অনেক দেশই সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির শিকার হয়েছে। ফলে চীন তাদের কাছে এক বিকল্প বন্ধু হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করছে।
গবেষকরা বলছেন, শি চাইছেন চীনকে উন্নয়নশীল বিশ্বের নির্ভরযোগ্য বন্ধু হিসেবে দেখাতে। নতুন উন্নয়ন ব্যাংক ও বিনিয়োগ প্রকল্পে সেই প্রচেষ্টা স্পষ্ট। যদিও শির সামনে চ্যালেঞ্জ অনেক। ২০২৭ সালে চতুর্থ মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হতে চাইছেন তিনি। এতে মাওয়ের পর সবচেয়ে শক্তিশালী নেতা হিসেবে নিজের অবস্থান আরও মজবুত করতে পারবেন তিনি।
কিন্তু আঞ্চলিক বিরোধ, শিল্প ভর্তুকি আর ভারতের গভীর অবিশ্বাস এখনও বড় প্রতিবন্ধক। বিশ্লেষকদের মতে, বিদেশি নেতাদের নিয়ে শির সাম্প্রতিক তৎপরতা নতুন কোন বিশ্বব্যবস্থা নয়, বরং পুরোনো সমস্যা থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়ার কৌশল।
শি চিনপিংয়ের নেতৃত্বে চীন কতটা ভিন্ন পথে এগোচ্ছে, তা হয়তো সময়ই বলে দেবে। তবে এবারের কুচকাওয়াজে পূর্বসূরিদের অনুপস্থিতি যে এক নতুন বার্তা দিয়েছে—তা বলাই যায়।
পতাকানিউজ/ওয়াইএস

