নওগাঁর মান্দা উপজেলায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কোটি টাকা মূল্যের সরকারি জমিতে অবৈধভাবে নির্মিত হয়েছে একটি রেস্টুরেন্ট। অভিযোগ উঠেছে, সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ আলম মিয়ার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের তিন শিক্ষার্থী ওই জমি দখল করে সেখানে রেস্টুরেন্ট গড়ে তুলেছেন।
জমিটি নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়কের আত্রাই নদীর ফেরিঘাট ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায়। রেস্টুরেন্টটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘মান্দা রিভার কোর্ট’। উদ্বোধনী নামফলকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়ালের নাম উদ্বোধক হিসেবে উল্লেখ থাকলেও তিনি উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন না।
ইউএনওর সঙ্গে সম্পর্ক, তারপর জমি ‘উপহার’
মান্দা উপজেলার সাবেক ইউএনও শাহ আলম মিয়া (৫ নভেম্বর ২০২৪–১৫ জুলাই ২০২৫) দায়িত্বে থাকার সময় তিন শিক্ষার্থী—রিপন, ফাহিম ও সজিব তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। বদলির আগে, ১৪ জুলাই, তাদের ‘উপহার’ হিসেবে সওজের জমি দখলে দিয়ে রেস্টুরেন্ট নির্মাণের সুযোগ করে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, স্থায়ী বাসিন্দা হলেও তিন শিক্ষার্থী মান্দায় পড়াশোনা করেন না। উপজেলা প্রশাসনের শেল্টারের ভেতর আধাপাকা ভবন তুলে রেস্টুরেন্ট করেছেন। কেউ বাধা দিতে গেলে পুলিশি হয়রানির ভয়ভীতি দেখানো হয় এবং দাবি করা হয়—জমিটি ১০০ বছরের জন্য লিজ নেয়া হয়েছে। এমনকি সড়কের একটি অংশ কেটে রেস্টুরেন্টে প্রবেশের রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। জমিটির বাজারমূল্য এক কোটি টাকারও বেশি।
অভিযুক্তদের বক্তব্য
শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ফাহিম রহমান বলেন, ‘জায়গাটিতে অবৈধভাবে রেস্টুরেন্ট নির্মাণের অভিযোগ সঠিক নয়। জমিটি লিজ নেয়ার উদ্দেশ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে একটি আবেদন করেছিলাম। লিজ গ্রহণের প্রক্রিয়াটি অনেকটাই এগিয়েছে। এ কাজে সার্বিক পরামর্শ দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করেছেন সাবেক ইউএনও শাহ আলম মিয়া।’
অন্য প্রতিনিধি রিপন বলেন, সড়ক বিভাগের জমিতে স্থায়ী কোন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়নি। শুধুমাত্র কংক্রিটের স্থাপনা নির্মাণ করে উপরে টিনশেড দিয়ে আপাতত রেস্টুরেন্টের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। জায়গাটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কখনো কোনো দপ্তরে আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মের পরিচয় ব্যবহার করিনি।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নওগাঁয় নেতৃত্ব দেয়া ফজলে রাব্বী বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। আমরা দখলদার-চাঁদাবাজদের দমনে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করছি। এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত থেকে প্রশাসনের সাথে লিঁয়াজো করে অবৈধ সুযোগ সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। তিন ছাত্র প্রতিনিধির বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগটি ক্ষতিয়ে দেখার পর সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থ্যা নেওয়ার জোড়ালো দাবি জানাচ্ছি।’
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
সাবেক ইউএনও শাহ আলম মিয়া বর্তমানে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমিতে উপপরিচালক (প্রশাসন) হিসেবে কর্মরত। তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি বিস্তারিত জানতাম না। আমি দাওয়াতে গিয়েছিলাম। ইউএনও থাকলে এমন অনেক দাওয়াতে অংশগ্রহণ করতে হয়। সব খোঁজ খবর নেওয়া সম্ভব হয় না।’
নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল হক বলেন, ‘তরুণ উদ্যোক্তা পরিচয়ে জমিটি লিজ গ্রহণের জন্য কয়েকজন শিক্ষার্থী আবেদন করেছিলেন। এরপরই বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এখনো এ সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। এরই মধ্যে জায়গাটিতে স্থাপনা নির্মাণের খবর আমরা পেয়েছি। যা সম্পূর্ণ আইনবহির্ভূত। অবৈধ স্থাপনাটি ভেঙে ফেলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

নামফলকে উদ্বোধক হিসেবে নাম থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘মান্দায় স্থানীয় যুবকদের উদ্যোগে নির্মিত একটু রেস্টুরেন্ট উদ্বোধনের বিষয়ে সাবেক ইউএনও শাহ আলম আমাকে জানিয়েছিলেন। সেখানে যাওয়ার সময়-সুযোগ হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘নামফলকে আমার নাম উল্লেখের বিষয়ে স্পষ্টভাবে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। পরবর্তীতে বিষয়টি নজরে এলে ওই যুবকদের ডেকে নামফলকটি সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছি। সেই সাথে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতিক্রমে সেখানে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বলা হয়েছে।’
পতাকানিউজ/কেএস

