সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদা পাথর পর্যটন স্পটে পাথর লুটের তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সিলেট কার্যালয়ের উপপরিচালকের নেতৃত্বে দুদকের তদন্ত দল সরেজমিন পরিদর্শন করে অনুসন্ধান শুরু করেছে।
বুধবার, ১৩ আগস্ট দুপুরে দুদক সিলেট কার্যালয়ের উপপরিচালক রাফী মোহাম্মদ নাজমূস সাদাতের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের তদন্ত দল সাদা পাথর এলাকা পরিদর্শন করেছে।
পরিদর্শন শেষে উপপরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি মূলত স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্ব। প্রশাসনের আরও সতর্ক থাকা প্রয়োজন ছিল। এছাড়া খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোসহ যেসব বিভাগ এর সঙ্গে যুক্ত তাদের লুট ঠেকাতে ভূমিকা রাখা প্রয়োজন ছিল।’
কত টাকার পাথর লুট হয়েছে প্রশ্নে দুদকের উপপরিচালক আরও বলেন, ‘এখানে কয়েকশ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ পাথর আত্মসাৎ করা হয়েছে। পর্যটকরা সাদা পাথর এলাকায় এসে হতাশ হচ্ছেন। এত সুন্দর পাথরগুলো লুটে নেওয়ায় তারা আফসোস করছেন। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করা হয়েছে।’
লুটপাটে জড়িতদের চিহ্নিত করা হবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আশপাশে অনেক স্টোন ক্রাশার মিল। এগুলোতে এখান থেকে পাথর নিয়ে ভাঙা হয়। এছাড়া এর সঙ্গে এখানকার প্রভাবশালী ব্যক্তি, স্থানীয় লোকজন, আরও অনেক উচ্চস্তরের ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালীরা জড়িত বলে শুনতে পাচ্ছি। আমরা এসব তথ্য নিয়ে আরও কাজ করব। পরিদর্শনের প্রতিবেদন প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করব। তারপর তাদের নির্দেশনায় পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যারা এই লুটে যুক্ত তাদের সবাইকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। এরপর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, সাদা পাথর প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট একটি পর্যটনকেন্দ্র। ২০১৭ সালে পাহাড়ি ঢলে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ পাথরমহালের ধলাই নদের উৎসমুখে পাঁচ একর জায়গাজুড়ে জমা হয় পাথর। ঢলের তোড়ে সেখানে সর্বশেষ ১৯৯০ সালে একবার পাথর জমা হয়েছিল। সেসব পাথরকে ‘ধলাসোনা’ বলে অভিহিত করা হয়। তবে পাহাড়ি ঢলের পর লুটপাটে সেসব পাথর নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। ২৭ বছরের মাথায় ফের পাথর জমা হওয়ায় উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের পাহারায় সংরক্ষিত হয়।
ওই বছর থেকে পুরো এলাকাটি প্রাকৃতিক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পায়। ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল লুংলংপুঞ্জি ও শিলংয়ের চেরাপুঞ্জি। সেখানকার ঝরনা থেকে সারা বছর নদের পানি প্রবহমান থাকে। বৃষ্টিবহুল চেরাপুঞ্জির পাদদেশ থেকে বর্ষায় ঢলের পানির সঙ্গে পাহাড় থেকে পাথরখণ্ড এপারে নেমে আসে। ভেসে আসা এই পাথর উত্তোলিত বা আমদানি করা পাথরের চেয়ে দামি। এটির কদরও বেশি। ব্যবহৃত হয় স্থাপত্যকাজে।
গত বছরের ৫ আগস্ট সাদা পাথর এলাকা প্রথম দফা লুটপাট হয়। এরপর বছরজুড়ে লুটপাট চলে। সর্বশেষ পাহাড়ি ঢল নামলে সেখানে অনেকটা ‘মব মচ্ছবে’ মেতে চলে পাথর লুটপাট। এ নিয়ে ‘মব মচ্ছবে সাদা পাথরের সর্বনাশ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনের সূত্রে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করে।
লুটপাটে বিএনপিদলীয় রাজনৈতিক তৎপরতা থাকায় সোমবার রাতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জেলার সহসভাপতি হাজি সাহাব উদ্দিনকে পদ থেকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। পরদিন মঙ্গলবার থেকে সাদা পাথর এলাকার পরিস্থিতি বদলায় এবং প্রশাসনও নড়েচড়ে বসে।
পতাকানিউজ/এমওয়াই

