শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েতে বৃহস্পতিবার (০৪ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে এক বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইট অবতরণ করে। বিমানের ভেতর তখনও হাতকড়া আর পায়ে শেকলে বাঁধা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো ৩০ জন বাংলাদেশি। রানওয়ে থেকে নামিয়ে আনবার আগেই তাঁদের শেকল খুলে ফেলা হয়। তবে অ্যারাইভাল গেটে পৌঁছানো পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা বজায় থাকে, কাউকে তাঁদের কাছে যেতে দেওয়া হয়নি, এমনকি ছবি তোলার সুযোগও মেলেনি।
বিমানবন্দরের প্রত্যক্ষদর্শী কর্মকর্তাদের বর্ণনায়, রাত ১১টার কিছু পর উড়োজাহাজ নামলেও সেটি তিন ঘণ্টা রানওয়েতে অবস্থান করে। সেখানে শিকল খোলা শেষে রাত ২টার দিকে তাঁদের অ্যারাইভাল এরিয়ায় আনা হয়। উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ টিম, কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য এবং যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মকর্তারা।
৬০ ঘণ্টার দীর্ঘ ভ্রমণে হাত-পায়ে শেকল পরা অবস্থায় রুটি আর পানি খেয়ে কাটাতে হয়েছে যাত্রীদের। এমনকি টয়লেটে যাওয়ার সময়ও অফিসার সঙ্গে নিয়ে গেছেন, ফিরে এসে আবার শেকল বেঁধে দিয়েছেন।
নোয়াখালীর ২২ বছর বয়সী আব্দুল্লাহ্ হতাশা প্রকাশ করে বলেন, আমাদের অপরাধ কী ছিল? বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ফেরত পাঠানো গেল, কিন্তু টেররিস্টের মতো শিকল পরিয়ে আনা হলো কেন? এই লজ্জা আর কষ্ট যেন আর কারও জীবনে না আসে।
ফেরত আসাদের মধ্যে একজন নারীও রয়েছেন। দীর্ঘ যাত্রা শেষে তিনি শারীরিকভাবে একেবারেই ভেঙে পড়েছিলেন বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর সূত্র।
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া জোরদার হয়েছে। শুধু চলতি বছরেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে অন্তত ১৮০ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত ২ আগস্ট সামরিক পরিবহন উড়োজাহাজ সি-১৭-এ করে নারীসহ ৩৯ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল একইভাবে শেকল পরিয়ে।
এর বাইরে ৮ জুন চার্টার্ড ফ্লাইটে ৪২ জন, আর মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত আরও ৩৪ জনকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। মার্কিন আইন অনুযায়ী বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অবস্থানকারীদের আদালতের রায় বা প্রশাসনিক আদেশে ফেরত পাঠানো যায়। সম্প্রতি প্রক্রিয়াটি দ্রুততর হওয়ায় চার্টার্ড ও সামরিক ফ্লাইটের ব্যবহার বেড়েছে।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ অভিবাসীদের শিকল পরিয়ে পাঠানো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের পরিপন্থী। ২০১৬ সালেও একইভাবে ২৭ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল, তখনও দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল।
ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান বলেন, বিদেশে ভালো জীবনের খোঁজে মানুষ যাবে—এটাই স্বাভাবিক। তবে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাতকড়া ও শেকল পরিয়ে রাখা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি তাঁদের সারা জীবনের ট্রমা হয়ে থাকবে। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরও মানবিক হবে।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্র্যাকের পক্ষ থেকে অর্থসহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পতাকানিউজ/এনটি

