চাকরি জীবনে যেসব মুক্তিযোদ্ধা সহকর্মী পেয়েছি, তাদের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই ভুয়া’ এমন বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট রংপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ‘দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘কর্মজীবী হিসেবে আমি চাকরি জীবনে যাদের মুক্তিযোদ্ধা সহকর্মী হিসেবে পাই, ধরে নিতে পারেন ৮০ থেকে ৯০ ভাগই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। আবার ৫ আগস্টের পর প্রায় লক্ষ্য করি সমন্বয়ক হাজির হন। এ সমন্বয়করা আদৌ সমন্বয়ক ছিলেন কি না এটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে। কাজেই এটাও আরেক সিনড্রোম, ভুয়া সমন্বয়ক সিনড্রোম। রংপুরে এই অনাচারটা কম। যদি এরকম অনাচার থেকে থাকে, তাদেরকে প্রতিরোধ করুন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কিন্তু ৭১ সালে ফেল করেছি, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ষা করতে। যে জন্য ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানরা পরবর্তী সময়ে ভালোভাবে বিরাজ করতে পেরেছে।’
চেয়ার বাঁচাতে আমলারা নিজেরাই রাজনীতিবিদদের কাছে যায় উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘একটা পর্যায় পর্যন্ত বিশ্বাস করতাম যে প্রশাসন রাজনীতিকিকরণ হয়। কিন্তু এখন ব্যাপারটা ঠিক উল্টো। আমি আমার চেয়ারটা রক্ষা করার জন্য, প্রমোশন পাওয়ার জন্য, বাড়তি সুযোগ পাওয়ার জন্য রাজনীতিবিদের কাছে যাই। গিয়ে বলি, প্লিজ গেটমি পলিটিসাইজ। আমি আপনার, আমি আপনাদের। কাজেই বড় রকম একটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। যেখান থেকে আমাদের ফিরতে হবে।’
মামলা ঝুলে থাকার বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘বহুদিন ধরে অনেক মামলা ঝুলে আছে। মামলা ঝুলে থাকে আদালতে, দুর্নীতি দমন কমিশনে না। আদালতেরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা চেষ্টা করবো ঝুলে থাকা মামলাগুলো যেন শেষ হয়। দুদকের কাজ বিচার করা না, দুদকের কাজ মামলা প্রস্তুত করে কোর্টে দেওয়া। কাজেই কোর্টকে অনুরোধ করবো মামলাগুলো যেন দ্রুত নিষ্পত্তি করে দেয়।’
দুদকের ধামাচাপা পড়া মামলা পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘বেশ কিছু পুরোনো মামলা আছে, নতুন মামলাও আসছে। পুরোনো অনেক মামলা বিভিন্ন কারণে ধামাচাপা অবস্থায় ছিল। এর কারণ আমি ব্যাখ্যা করতে চাই না। আমরা সেই মামলাগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
প্রধান উপদেষ্টা দুর্নীতির বিপক্ষে উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক সরকার নয়, অন্তর্বতীকালীন সরকার। এ সরকারের নেতৃত্বে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি একেবারেই দুর্নীতির বিপক্ষের একজন মানুষ। তাঁর উপদেষ্টা পরিষদের যে কেউ হন সেক্ষেত্রেও বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি নন।’
পতাকানিউজ/এসআই/এএইচ

